‘নাশকতা প্রতিরোধ’, ‘নাশকতাকারী’দের দমনে কি সাধারণ পুলিশই যথেষ্ট নয়? নইলে রাজবাড়ীতে নতুন করে স্পেশাল টাস্কিং গ্রুপ (এসটিজি) গঠন করার প্রয়োজন কী?
রাজবাড়ী থেকে প্রথম আলোর সাংবাদিক জানাচ্ছেন, জেলা পুলিশ এসটিজি নামের পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করেছে। এই দলভুক্ত পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ সুপার বিশেষ একধরনের পোশাক দিয়েছেন। সাদা কলারের মেরুন রঙের পোলো শার্ট ও খাকি প্যান্ট পরে অস্ত্র হাতে তাঁরা রাজবাড়ীতে টহল দিচ্ছেন।
রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও দেখা দিতে পারে। এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য এই বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি বিভাগ ও ইউনিট রয়েছে। যেমন পুলিশের এসবি (বিশেষ শাখা), সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ), ডিবি (গোয়েন্দা বিভাগ), রেলওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও অ্যান্টিটেররিজম পুলিশ। শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মধ্যে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ মোট ২৪টি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগের কাজ সুনির্দিষ্ট ও তাদের পোশাক কেমন হবে, তা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাজবাড়ীতে এসটিজির লাল পোলো শার্ট পরার ব্যাপারে কি সেই নির্দেশনা মানা হয়েছে?
পোশাক নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ নির্দেশনাটি জারি হয় ২০০৪ সালের ১০ জানুয়ারি। কোনো কোনো ইউনিট পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমোদনক্রমে বিশেষ ধরনের পোশাকেরও ব্যবস্থা করেছে, যেমন সোয়াট। তবে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলা পুলিশ নতুন এই ইউনিট গঠন ও পোশাক প্রবর্তনে পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমতি নেয়নি।
এ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছে। লাল পোশাকের এ ধরনের একটি বাহিনী কি একজন পুলিশ সুপার নিজের ইচ্ছায় গঠন করতে পারেন? এটা কি আইন মেনে হয়েছে? তা ছাড়া জেলা পুলিশ সুপার নিজেই বলেছেন রাজবাড়ীতে নাশকতার ঘটনা তেমন একটা ঘটেনি। তাহলে কেন সানগ্লাস চোখে, নতুন পোশাক পরে নতুন নামে একটি ইউনিটের অস্ত্র হাতে জেলায় প্যারেড করতে হয়েছে? এর সদস্যদের পুলিশ বাহিনীর কোন বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে?
পুলিশের পোশাক আমজনতা থেকে তাদের আলাদা রাখে। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার নিজের পছন্দমতো যে পোশাক নতুন এই দলের সদস্যদের দিয়েছেন, তা যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে, তা কি তিনি বিবেচনায় নিয়েছেন? এই পোশাকের অপব্যবহার যদি কেউ করে, তবে তার দায় নেবে কে? বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এই অপব্যবহারের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সহায়ক শক্তি হিসেবে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা তৎপর।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ অবশ্য মনে করেন, বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণ নেই। প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, অন্যান্য জেলায় কুইক রেসপন্স টিম আছে, এটাও তেমন। তারা অস্ত্র হাতে পোলো শার্ট পরে টহল দিতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার সময় ডিবি ও সিআইডি সাদাপোশাক পরতে পারে। যদিও তিনি নিজেই বলেছেন, নাশকতা ঠেকাতে নতুন এই ইউনিটটি অভিযান পরিচালনা করবে।
সে ক্ষেত্রে ডিবি, সিআইডির প্রসঙ্গ টানা কতটা যৌক্তিক? নতুন পোশাক পরা পুলিশের একটি দলকে মাঠে নামানোর পেছনে রাজবাড়ী জেলা পুলিশের কী চিন্তা কাজ করেছে, তা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
আমরা আশা করছি, পুলিশ সদর দপ্তর বিষয়টি পরিষ্কার করবে।