চিকিৎসকদের উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি রোগীদের উন্নত মানের চিকিৎসা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠানটি মানুষের আস্থাও অর্জন করেছে। তাঁরা ভাবেন, এই হাসপাতালে গেলে ভালো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে।
কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে মাঝেমধ্যে এমন খবর আসে, যাতে আস্থা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ২০ জুন প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অর্ধেক আইসিইউ নষ্ট। সেখানে আইসিইউর শয্যা ১০১টি; এর মধ্যে নবজাতকের আইসিইউ ২০ ও শিশুদের আইসিইউ ২০টি। এগুলোর মধ্যে ৪২টিই নষ্ট। ২০টি আইসিইউ আনার পর চালুই করা হয়নি। সে ক্ষেত্রে ৬২টি আইসিইউ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এ ছাড়া সেখানে এইচডিইউর শয্যা আছে ১৪টি, যার ৪টি কাজে লাগানো যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে।
দেশে আইসিইউর সংকট যে কত ভয়াবহ, তা করোনাকালে দেশবাসী হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই যে চাহিদার তুলনায় সরকারি–বেসরকারি সব হাসপাতালেই আইসিইউর সংখ্যা কম। কিন্তু দেশের সেরা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে আইসিইউ নষ্ট বা অব্যবহৃত অবস্থায় থাকবে, এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। সব রোগীর জন্য আইসিইউর প্রয়োজন হয় না। জটিল, সংকটাপন্ন ও মুমূর্ষু রোগীকেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হয়।
স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল হিসেবে বিএসএমএমইউর আইসিইউতে খরচ তুলনামূলক কম। এখানে সাধারণ আইসিইউর দৈনিক ভাড়া ২ হাজার ১০০ টাকা। লাইফ সাপোর্ট যন্ত্র ও মনিটরের ব্যবহার হলে আরও ৯৬০ টাকা দরকার হয়। অর্থাৎ দৈনিক খরচ ৩ হাজার ১০ টাকার বেশি নয়। আর নবজাতকের জন্য দৈনিক খরচ দেড় হাজার টাকা। অন্যদিকে ঢাকার যেকোনো মাঝারি মানের বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে খরচ দৈনিক ১৫ হাজার টাকা। আর নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে দিনে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়।
আইসিইউ নষ্ট থাকা সম্পর্কে বিএসএমএমইউর সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেছেন, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর নষ্ট বা অকার্যকর আইসিইউর তালিকা তৈরি করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। সেগুলো চালুর জন্য যে জনবল দরকার, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যন্ত্রপাতি কেনার জন্য অর্থছাড়েরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আইসিইউ চালু করার সঙ্গে প্রশাসনিক রদবদলের কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। এটি চলমান প্রক্রিয়া। আইসিইউ কিংবা হাসপাতালের অন্য যেকোনো যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে পুনঃস্থাপন করা হবে। জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ যথার্থই বলেছেন, উন্নত ও মানবিক সেবার সংস্কৃতি এখনো এখানে গড়ে ওঠেনি। গড়ে উঠলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অর্ধেকের বেশি আইসিইউ মাসের পর মাস অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকত না।
আইসিইউ নষ্ট থাকার পাশাপাশি হাসপাতালটিতে দক্ষ জনবলেরও ঘাটতি আছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, আইসিইউর রোগীর চিকিৎসার জন্য যেসব দক্ষ নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী থাকা প্রয়োজন, তা সেখানে নেই। দুজনের কাজ একজনকে দিয়ে চালানো হয়। কোনো কোনো সময় তা–ও থাকে না। দেশের সেরা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালের এই অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
আমরা আশা করব, অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের নষ্ট আইসিইউগুলো চালু ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করা হবে। হাসপাতালে যদি জরুরি যন্ত্রপাতি ও দক্ষ লোকবলই না থাকে, তাহলে একের পর এক বাহারি ভবন করে লাভ কী।