শুধু কথায় বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে না

সম্পাদকীয়

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থ সরকার। আওয়ামী লীগ ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে ১২টি অগ্রাধিকারের শীর্ষে ছিল নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। অথচ গত কয়েক দিনে চাল, আটা, ময়দা, মাংসসহ বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়তির দিকে।

ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নভেম্বরে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত প্রায় ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বছরের শুরুতেই যদি চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম আবার বাড়তে থাকে, মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের পুরোটা সময়ই সীমিত আয়ের মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে অতিষ্ঠ ছিলেন। এ অবস্থায় নতুন করে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে আরও নাজুক অবস্থানে চলে যাবেন।

নির্বাচনের পর হঠাৎ গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা হওয়া স্বাভাবিক নয়। গত কয়েক মাসে ৬০০–৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। মাংস ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ৭০০ টাকার কমে বিক্রি করলে তাঁদের পোষাচ্ছে না। তাহলে আগে তাঁরা মাংসের দাম কমিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে? সেটা কি ‘নির্বাচনী উপঢৌকন’ ছিল? নির্বাচন চলে যাওয়ার পর আবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

গরুর মাংসের দাম বাড়লে মুরগি, খাসির মাংস ও মাছের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ দাম বাড়বে। আটা–ময়দার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আমদানিকারকেরা টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলার–সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছেন। কিন্তু চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চার–পাঁচ টাকা বেড়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এ ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের, আড়তদারেরা মিলমালিকদের দোহাই দিচ্ছেন। সমস্যাটা কোথায়, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কিছু কিছু মহল চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি বাড়ায়।’ এই কিছু মহলকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব কার?

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে রোজায় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র রমজান সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় আট খাদ্যপণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশে রমজান মাসে যাতে এসব পণ্যের কোনো ঘাটতি না হয়, সে জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। খাদ্যপণ্যগুলো হচ্ছে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর।

এবার রোজা শুরু হবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। অতএব মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর ক্ষেত্রে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দাম বাড়ানোর যে তৎপরতা চলছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, সেটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে চাইলে এই মুহূর্তে এসব পরিষেবার দাম বাড়ানোর চিন্তা বাদ দিতে হবে।

মন্ত্রী–সচিবেরা এত দিন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা বলে আসছিলেন। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন অভিভাবকের কাজ হবে সেই অদৃশ্য সিন্ডিকেটকে দৃশ্যমান করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নীতিনির্ধারকেরা অনেক কথা বলেছেন। এখন কাজেই সেটা প্রমাণ করতে হবে।

নতুন সরকারের কাছে সেই দাবি জানানো নিশ্চয়ই অযৌক্তিক হবে না।