বান্দরবানে এই ধ্বংসযজ্ঞ কি চলতেই থাকবে

সম্পাদকীয়

আজ বিশ্ব বন দিবস। দেশের বন বা বনাঞ্চলগুলো কেমন আছে? দখল, পাহাড় ধ্বংস ও গাছ নিধনের কারণে দিন দিন বনভূমির পরিমাণ কমে আসছে, তাতে সন্দেহ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলগুলোতে গাছ নিধন নতুন নয়। গভীর বনে ঢুকে গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে। সেই গাছ পাচার করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক বনভূমির এমন সর্বনাশ করায় পার্বত্য এলাকা ও সেখানকার অধিবাসীদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

বান্দরবানের লামার সরইয়ে ম্রো পাড়ার শত বছরের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় করে ফেলছে একটি দুর্বৃত্ত চক্র। দুর্গম বনের গাছ সড়ক পর্যন্ত হাতি দিয়ে টেনে পুলিশ বন বিভাগের চেকপোস্টের ওপর দিয়েই পাচার করা হচ্ছে। মৌজার হেডম্যানসহ (মৌজাপ্রধান) ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবাধে গাছ পাচারে লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম ও তাঁর ভাই মোরশেদ আলম জড়িত রয়েছেন। বাধা দেওয়ায় পাড়াবাসীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দেন তাঁরা। ফলে পাড়াবাসী আতঙ্কে থাকেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরই ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংসের চিত্র দেখতে পেয়েছেন। পাহাড়ি পাড়া থেকে রাস্তা, খাল ও ঝিরি ওপরে–নিচে সবখানে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। গাছ কাটার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে রোহিঙ্গা শ্রমিকও। এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, পাচারকারীদের অবাধ পাচারে লেমুপালং ও লুলাইংমুখের দুই-তৃতীয়াংশ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়েছে। পাচার বন্ধ না হলে কয়েক বছরের মধ্যে লেমুপালং ও লুলাইং মৌজায় আর কোনো প্রাকৃতিক বনাঞ্চল থাকবে না।

বন বিভাগ ও পুলিশের চোখের সামনেই এই গাছ পাচার চলছে। তার মানে কি তারা অবাধে গাছ পাচারের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে? শত বছরের বনাঞ্চল ধ্বংসের দায় অবশ্যই গুরুতরভাবে তাদের ওপর বর্তায়।

গাছ পাচারের জন্য অবাধে বন ধ্বংস করায় ঝিরির পানি দূষিত হয়ে গেছে। ঝিরির বাঁকে বাঁকে কেটে ফেলা ঝোপঝাড় পচে পানি লালচে রং ধারণ করেছে। দুই পারের বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় ঝিরির পানি গরম হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার ম্রো পরিবারগুলোর পানিসংকটের আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বক্তব্য, লেমুপালং ও লুলাইং এলাকাগুলো দুর্গম হওয়ায় সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা সম্ভব নয়। বন বিভাগের চেকপোস্ট হয়ে অবৈধ কাঠ পাচারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বনাঞ্চলের এমন ভয়াবহ ধ্বংসচিত্রের পর বন কর্মকর্তার এ বক্তব্যে আমরা আশ্বস্ত হতে পারি না। বন বিভাগ, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের একটাই জানতে চাওয়া, তারা কি বনাঞ্চলটি ধ্বংস হতে দেওয়ারই পণ করেছে?