এই ‘খারাপ দৃষ্টান্তের’ অবসান হোক

সম্পাদকীয়

আমাদের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাজই হলো যেকোনো ছলছুতোয় বিদেশ যাওয়া। লিফট দেখা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার দেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও তাঁরা বিদেশে যান।

আর্থিক সংকটের কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ সরকারি খরচে বিদেশে যেতে পারবেন না। এ ব্যাপারে একাধিকবার প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে তাঁদের বিদেশ সফর রহিত করা যায়নি, হয়তো ভবিষ্যতেও যাবে না।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী গত বছরের ৫ নভেম্বর ১০ দিনের জন্য ফিনল্যান্ড সফরে যান। এর আগে ফিনল্যান্ডের হাবা গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদল এসে মেয়রের সঙ্গে দেখা করে চট্টগ্রাম শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়, এ সফরের যাবতীয় খরচ বহন করবে ফিনল্যান্ডের হাবা গ্রুপ। এর আগে ও পরে মেয়র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও সফর করেছেন ওই দুই দেশের ব্যবসায় আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের খরচে। সেটাও ছিল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত।

নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেন ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ইতিমধ্যে তিন বছর তিন মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বাসিন্দাদের প্রধান যে সমস্যা, জলাবদ্ধতা, তার কোনো সুরাহা হয়নি। ভারী বৃষ্টির সময় চট্টগ্রাম শহর ডুবে যায়। চলতি মাসে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেও নগরবাসী অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে পড়ে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন যেসব প্রকল্প নিয়েছে, কোনোটি সময়মতো শেষ করতে পারেনি। অন্যদিকে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের বাইরেই ছিলেন ৭৪ দিন।

আরও অনেকের মতো চসিক মেয়রেরও বিদেশ সফর করা শখ হতে পারে। সরকারের অনুমতি নিয়ে তিনি নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে গেলে নিশ্চয়ই কারও কিছু বলার থাকত না। কিন্তু যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম শহরের উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তাদের অর্থে বিদেশে যেতে পারেন না। এখানে নৈতিকতার প্রশ্ন আছে। যেসব প্রতিষ্ঠান তাঁর বিদেশ সফরের জন্য টাকা খরচ করেছে, কাজ পেলে সেই টাকাও তুলে নেবে এবং সেটি বাংলাদেশের জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অর্থে চসিক মেয়রের বিদেশ সফরকে খারাপ দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তাঁর প্রশ্ন, যারা প্রকল্পের কাজ করবে, তাদের টাকায় কেন মেয়র বিদেশে যাবেন? কোম্পানিগুলোর স্বার্থ কী? তারা কেন টাকা খরচ করে মেয়রকে বিদেশে নিয়ে যাবে?

কেবল চসিক মেয়রই নন, এ রকম ব্যক্তি প্রশাসন ও নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে বহু আছেন। যে দেশে শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার দেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে যান, সে দেশে কর্তাব্যক্তিদের বিদেশ সফর ঠেকানো সহজ নয়। আমরা চসিক মেয়রের বিদেশ সফরের বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ার অর্থ এই নয় যে তিনি আইন ও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে।