সাধারণ ক্ষমার সুযোগ কি তাঁরা নেবেন

সম্পাদকীয়

একাত্তরে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁরা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য সেটি করেননি। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের পর সরকারের দেওয়া সনদও নেননি। তাঁদের দাবি, দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন, সনদ নিতে হবে কেন? এরপরও রাষ্ট্রের একটা কর্তব্য আছে। অন্তত রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁরা সেই স্বীকৃতি পেতে পারেন। এর মাধ্যমে কেবল মুক্তিযোদ্ধা নয়, রাষ্ট্রই সম্মানিত হবে।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করার এই যুক্তি মেনে নিয়েও যে প্রশ্নটি উঠেছে, তালিকার কতজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আর কতজন মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সেই সুবিধা ও খ্যাতি নিয়েছেন? এই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে যে অমুক্তিযোদ্ধাদের স্বেচ্ছায় নাম প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে চলে যেতে চান, তাহলে তাঁকে দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) দেওয়া হবে। সাধারণ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। নাম প্রত্যাহার না করলে প্রতারণার দায়ে তাঁদের অভিযুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তাঁর এই আহ্বানকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। কেননা সব সরকারের আমলেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে নয়ছয় হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্তির প্রবণতা তখনই বাড়ল, যখন মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী দেওয়া চালু হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমাও সরকার দুই বছর বাড়িয়েছিল। সেই সুযোগেও অনেক অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা সেজে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে সচিবসহ এ রকম কিছু অমুক্তিযোদ্ধার তথ্য ফাঁস হলেও কারও বিরুদ্ধে শাস্তি হয়েছে বলে জানা যায়নি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার এই আহ্বানকে আমরা সাধারণ ক্ষমার বলে মনে করি। যাঁরা এই সুবিধা নেবেন, তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু যাঁরা সেই সুবিধা নেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা যেমন নিতে হবে, তেমনি সামাজিকভাবেও তাঁদের বর্জন করতে হবে। যেসব অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা সেজে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তা ফেরত আনারও ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কেউ এই অসাধুতার আশ্রয় নিতে ভয় পাবেন।

একজন মানুষ নিজে মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা নেবেন, এটা অমার্জনীয় অপরাধ। এর মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধের যে মহৎ চেতনা ও মূল্যবোধ, তাকে অপমান করেছেন। যেসব অমুক্তিযোদ্ধা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করবেন না, তাঁদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।