প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার শেষ নেই। তাঁরা নানা দাবিদাওয়া নিয়ে রাজধানীতে দিনের পর দিন পড়ে থাকেন। আন্দোলন, অনশন—সবই করেন। কিন্তু দিন শেষে তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয়।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা তাঁদের বেতনের একাংশ পান প্রতিষ্ঠান থেকে, আরেকাংশ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তুলনায় সুযোগ-সুবিধায় অনেক পিছিয়ে তাঁরা। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নানা কোন্দল ও ব্যক্তির অনিয়মের কারণে অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক ঠিকমতো বেতন পান না। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ আইডিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাজবাড়ীর এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির দিনে টানা কয়েক মাস বেতনহীন থাকায় সীমাহীন কষ্টের মধ্যে আছেন তাঁরা। বিষয়টি রীতিমতো অমানবিক। তাঁদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বেতন বন্ধ রয়েছে। এমনকি এ অভিযোগও উঠেছে, প্রধান শিক্ষক বেতন ছাড়ের জন্য ছয় লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার সাহা বলেন, তিনি বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। অর্থাভাবে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ খেতে পারছেন না, সংসারের চাহিদাও মেটাতে পারছেন না। দোকানদারেরা বাকি দিতে চাইছেন না। প্রধান শিক্ষক যেনতেন কারণে তাঁদের গালিগালাজ করে গায়ে হাত তোলেন। প্রধান শিক্ষকের দুর্ব্যবহারের কারণে কিছুদিন আগে তিনি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন আটকে দেওয়া, ঘুষ চাওয়া, গালিগালাজ করা ও গায়ে হাত তোলার মতো এত সব অভিযোগে প্রকাশ পায়, বিদ্যালয়টিতে কী পরিমাণ স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ফকীর আবদুল কাদের। নিজে একজন শিক্ষক হয়ে কীভাবে এতটা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পারেন তিনি!

এসব বিষয়ে ২০ নভেম্বর ১৯ জন শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষকদের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকীর আবদুল কাদের।

তবে শিক্ষকদের অভিযোগ পাওয়ার পর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষককে বারবার বেতন-ভাতার বিলের কাগজে সই করতে অনুরোধ করলেও তিনি সই করেননি।

ইউএনও মো. জাকির হোসেনের বক্তব্য, প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতার কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন তিনি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। আমরা আশা করব, তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।