গুরুতর ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার কী হবে 

সম্পাদকীয়

২০৩০ সালের মধ্যে সরকার টেকসই যে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে, তার কেন্দ্রীয় স্লোগান হলো ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না’। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগের ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিভাগীয় শহরগুলোরই যে বিস্তর ব্যবধান, তাতে সেটা কতটা গালভরা স্লোগান আর তা বাস্তবায়নে কর্তাব্যক্তিরা কতটা আন্তরিক, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়। বরিশাল বিভাগের কোনো একটি হাসপাতালে প্লাটিলেট সেল অপারেটর বা প্লাটিলেট আলাদা করার যন্ত্র নেই। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত গুরুতর রোগী, যাঁদের জীবন রক্ষাকারী প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন হলে তাঁদের ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের দিকে। একসময় ধারণা ছিল, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মূলত ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক। কিন্তু ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। সে বছর বরিশাল বিভাগে সাড়ে সাত হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন।

দুই বছর প্রকোপ কম থাকলেও এ বছর অক্টোবর মাস শেষ হলেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমার লক্ষণ নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৪ জন এবং মারা গেছেন ৫ জন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভাগের ছয় জেলার ছয়টি সদর হাসপাতাল ও পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোনোটিতেই প্লাটিলেট সেল সেপারেটর মেশিন নেই।

অথচ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর চাপে অনেককে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সাধারণ ওয়ার্ডেই পৃথক একটি কর্নার করে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে, তাতে অন্যদের মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও মুখপাত্র শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেছেন, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নেই।

গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের দ্রুত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবার বিভাগীয় হাসপাতালটিতে প্লাটিলেট দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে গুরুতর রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মোট আক্রান্তের ৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর মারাত্মক রক্তক্ষরণ জটিলতা হতে পারে। ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা। বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু রোগীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন।

প্রশ্ন হলো, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের রোগীদের কেন বিভাগীয় শহরে আসতে হবে? কেন একটা বিভাগে একটিও প্লাটিলেট সেপারেটর মেশিন থাকবে না? বরিশাল বিভাগের গুরুতর ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার কী হবে।