২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বটিয়াঘাটা একাডেমিটি সচল করুন

সম্পাদকীয়

সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলে জোয়ার তুলে দেওয়ার কারিগর আমাদের মেয়েরা। ২০২২ সালে দেশের নারী ফুটবল দল সাফ শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ে। শুধু তা–ই নয়, বয়সভিত্তিক পর্যায়েও একের পর এক সাফ শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। নারী ফুটবলের এমন জয়জয়কার সময়ে খুলনায় মেয়েদের একটি ফুটবল একাডেমির কার্যক্রম থমকে গেছে। অথচ জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে দারুণ সাফল্য রেখেছিল একাডেমিটির মেয়েরা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও কেউ দেখভালের দায়িত্ব না নেওয়ায় মেয়েরা ফুটবল খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে একধরনের সামাজিক চাপ সব সময়ই থাকে। সেসব বাধা–প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েই অনেক মেয়ে ফুটবল খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। গত বছর খুলনার বটিয়াঘাটার নারী ফুটবল একাডেমি তেঁতুলতলা সুপার কুইনের নারী ফুটবলাররা দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয়েছিল। ওই ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়। নানা জায়গা থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়ে মেয়েরা আবারও মাঠে ফেরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশ্রুতিগুলো ভুলতে থাকেন সবাই। একপর্যায়ে থমকে যায় ফুটবল একাডেমিটির গতি।

ফুটবল একাডেমিটির বেশির ভাগ খেলোয়াড় এসেছে দরিদ্র পরিবার থেকে। ফলে দীর্ঘদিন খেলার বাইরে থাকায় তারা মনোবল হারিয়ে ফেলছে। ইতিমধ্যে দুই মেয়ের বিয়েও হয়ে গেছে, যার মধ্যে আছে হামলার শিকার ফুটবলারও। মূলত সাংগঠনিক দুর্বলতা ও আর্থিক সংকটে একাডেমির কার্যক্রম গতি হারিয়েছে। সংকটের মধ্যে আছে একাডেমিটি কোচ ধরে রাখতে পারছে না। এমনও অভিযোগ উঠেছে, মেয়েরা যাতে খেলতে না পারে, সে জন্য কোচকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান একাডেমি পরিচালনায় যাঁরা আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকজন মেয়েকে তাঁরা একাডেমি থেকে বের করে দিয়েছেন।

২০১৩ সাল থেকে তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপে বারবার জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিভাগীয় পর্যায়েও খুব ভালো করছিল। মেয়েদের ফুটবল নিয়ে ভালো কিছু করার তাগিদে পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল একাডেমিটির কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুর দিকে স্কুল-কলেজে পড়া ৩০-৪০ জন মেয়ে একাডেমিতে নিয়মিত ফুটবল অনুশীলন করত। তখন বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় আরও অনেকে আর্থিক সহায়তা দিতেন। আগের মতো সেই সহায়তা না পাওয়া একাডেমিটিতে স্থবিরতা নেমে আসার বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একটি কার্যকর, সচল ও সম্ভাবনাময় ফুটবল একাডেমি এভাবে থমকে যাবে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। স্বপ্নবান ও নিঃস্বার্থ ক্রীড়াবান্ধব মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া একটি ক্রীড়া একাডেমি চালানো কোনো সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নেবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্রীড়ামোদী মানুষের সহায়তায় ফুটবল একাডেমিটি আবারও কার্যকরভাবে সচল করবে।