অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করুন

সম্পাদকীয়

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবিলম্বে সংস্কার করুন। পোড়া স্কুলে যেতে শিশুরা ভয় পাচ্ছে। এতে তাদের নতুন বছরের লেখাপড়া শুরু করতে যেমন দেরি হচ্ছে, তেমনি তারা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা আছে। প্রথম আলোর নান্দাইল প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, নির্বাচনের (৭ জানুয়ারি) দুদিন আগে শুক্রবার রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা বিদ্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আগুনে স্কুলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দোতলা স্কুল ভবনের নিচতলার তিনটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, শিক্ষকদের টেবিল ও ব্ল্যাকবোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা পুড়ে গলে গেছে। তা ছাড়া কক্ষের চারপাশের দেয়াল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। কক্ষের কোনো কোনো জায়গায় ফাটল।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নান্দাইলের এই স্কুলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও বেশ কিছু স্কুলে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের হিসাবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চবিদ্যালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে।

প্রতিটিই সরকারি স্কুল। এখন পর্যন্ত স্কুলে আগুন কে বা কারা লাগিয়েছে, জানা যায়নি। এ ধরনের ঘটনায় সম্পৃক্তদের শনাক্ত ও ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গড়িমসি আছে। অনেক সময় তারা একে-ওকে গ্রেপ্তার করলেও তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ফলে কবে প্রকৃত অপরাধী গ্রেপ্তার হবেন এবং তাঁর বা তাঁদের বিচার হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

আমরা এসব দুর্বৃত্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধের শর্ত ঠিক করেছে। স্কুলে হামলা শর্তের গুরুতর লঙ্ঘন। বাংলাদেশে তো কোনো যুদ্ধ হয়নি, হয়েছে একটা নির্বাচন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্কুলে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে লজ্জাকর ঘটনা আর কী হতে পারে?

হরিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেগম নুরুন্নাহার বলেছেন, স্কুলের দেয়ালগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা মনে করি, এখনই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্কুলগুলো মেরামত করা প্রয়োজন। নইলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। উদার মানবতাবাদী রাষ্ট্রগুলো শিশুদের সহিংসতা বা ভীতির উদ্রেক করে, এমন ঘটনার সংস্পর্শে আসতে দেয় না। আমাদের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলে থাকে শিশুরা তাদের উন্নয়ন-ভাবনার কেন্দ্রে, যদিও বাস্তবে এর মিল কমই দেখা যায়।

প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে শিশুরা বলেছে, স্কুলে ঢুকতে তারা ভয় পাচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সমাজের অনগ্রসর পরিবারের সন্তানেরা লেখাপড়া করে। তাদের বড় অংশই অপুষ্টির শিকার। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই শিশুদের প্রতি সবারই নজর কম। আশা করি, সরকার এই দফায় সংবেদনশীলতার পরিচয় দেবে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে দ্রুত উদ্যোগী হবে।