দাম বাড়ানো নয়, সুপেয় পানির নিশ্চয়তা দিন

সম্পাদকীয়

ঢাকা ওয়াসা আগামী ১ জুলাই থেকে পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণ করেছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা, যা এখন আছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য একই পরিমাণ পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ টাকা ২০ পয়সা, যা বর্তমানে আছে ৪২ টাকা।

ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ওয়াসা আইন, ১৯৯৬-এর ২২ ধারার দোহাই দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত মিটারবিহীন হোল্ডিং, গভীর নলকূপ, নির্মাণাধীন ভবন, ন্যূনতম বিলসহ সর্বপ্রকার (পানি ও পয়ো) অভিকরের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।

আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা বছরে ৫ শতাংশ পানির দাম বাড়াতে পারে। ৫ শতাংশের বেশি হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। সেই অনুমোদনও তারা নিয়েছে। কিন্তু পানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে পরিচালনা বোর্ডের যে অনুমোদন নেওয়ার কথা, সেটা তারা নেয়নি। ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেছেন, ‘পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে বোর্ডে কোনো আলোচনা হয়নি। এটা কোন প্রক্রিয়ায় হয়েছে, তার ব্যাখ্যা আমি পাইনি। বোর্ডের পরবর্তী সভায় জানতে চাইব।’

পানির দাম বাড়ানোর মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত যদি পরিচালনা বোর্ডকে অগ্রাহ্য করে করা হয়ে থাকে, তাহলে সেই বোর্ডের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। তাঁর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করার কারণে ২০২৩ সালের মে মাসে বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে সরে যেতে হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে, ২০২১ সালের পর পানির দাম আর বাড়ানো হয়নি। ২০২২ সালে তারা আরেকবার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েও কার্যকর করতে পারেনি উচ্চ আদালতে রিট হওয়ার কারণে। ওই রিটে বলা হয়েছিল, ওয়াসা দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিধি মানেনি। এবারও তারা বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে পানির দাম বাড়িয়েছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৬ বছরে ঢাকা ওয়াসা ১৬ বার পানির দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু তারা কি গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পারছে? তারা যে পানি সরবরাহ করছে, তা কি মানসম্মত? এই প্রশ্নের উত্তর হলো ‘না’।

ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিদেশি ঋণ ও লোকসানের দোহাই দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পে ওয়াসার ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার কোটি টাকা। পানির দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ওয়াসা যে বাড়তি অর্থ পাবে, সিস্টেম লসের নামে তার চেয়ে বেশি অর্থ অপচয় করছে। প্রথম আলোর তথ্য হচ্ছে, ঢাকা ওয়াসা যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করে, তার ২০ শতাংশ গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছায় না; যার আর্থিক পরিমাণ ২৮০ কোটি টাকা।

ঢাকা ওয়াসা দফায় দফায় পানির দাম বাড়ালেও নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না। প্রায় শতভাগ গ্রাহককে ওয়াসার পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। তাই ঢাকা ওয়াসার কাছে এই দাবি করা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক হবে না যে আগে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করুন, তারপর দাম বাড়ানোর কথা ভাবুন। মানুষকে সুপেয় পানি না দিয়ে দাম বাড়িয়ে তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দেওয়ার অধিকার সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানের নেই।