ভোলায় যুবলীগ নেতা কি আইনের ঊর্ধ্বে

সম্পাদকীয়

পরিবেশের বারোটা বাজার পেছনে বড় একটি কারণ হচ্ছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া। পাহাড় কাটলে যে জেল-জরিমানা দেওয়া হয়, তা অনেকটা গুরু পাপে লঘুদণ্ডের মতোই মনে হয়। অথচ পাহাড়টি হারিয়ে যায়। অবৈধভাবে বালু তুললে বা মাটি কাটলে যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়।

বলা হয়ে থাকে দু-এক দিনের তোলা বালু বা মাটি বিক্রি করেই সেই যন্ত্রপাতির ক্ষতি উশুল হয়ে যায়। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া বা জরিমানা করা হলেও অনেক সময় মালিকদের ধরা হয় না। ভোলার চরফ্যাশনেও এমন একটি চিত্র দেখা যাচ্ছে। সেখানে চরমভাবে আইন লঙ্ঘন করেও এক যুবলীগ নেতা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যুবলীগের ওই নেতার নাম মো. নুর ইসলাম। তিনি চরফ্যাশনের আসলামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বন বিভাগের গাছ কেটে ও সরকারি খাল ভরাট করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করছেন। প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা একটি খননযন্ত্র জব্দ করে কাজ বন্ধ করে দিলেও ভাটা নির্মাণের তৎপরতা বন্ধ হয়নি।

চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের মাইনুদ্দিন ঘাটের উত্তর-পশ্চিমে ওই ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ইটভাটা নির্মাণ করতে গিয়ে কোনো নিয়মকানুন বা আইনের ধার ধারেননি নুর ইসলাম। ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। সেই ছাড়পত্র দেখে স্থানীয় প্রশাসন ইটভাটার জন্য অনুমোদন দেয়। কিন্তু এই যুবলীগ নেতা কোনো প্রক্রিয়াই মানেননি।

অবৈধভাবে ইটভাটা তৈরি করতে গিয়ে পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া নদীভাঙনের শিকার উদ্বাস্তু মানুষদেরও ভয়ভীতি দেখিয়ে উচ্ছেদ করছেন তিনি। গত চার-পাঁচ দশকে বাঁধের দুই পাশে এসব গৃহহীন মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। সেই বাঁধ এলাকায় আবার বনায়ন করেছে বন বিভাগ। আইন অনুযায়ী, ঘনবসতি ও বনাঞ্চলের সীমারেখায় ইটভাটা করার কোনো সুযোগ নেই।

এর মানে একের পর এক আইন ভঙ্গ করেছেন যুবলীগ নেতা নুর ইসলাম। বন বিভাগের গাছ কেটেছেন, পাউবোর জমি দখল করেছেন, সেখানে মাটি কেটেছেন, লোকালয় উচ্ছেদ করতে মানুষজনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছেন, এমনকি সেখানকার একটি খালও ভরাট করেছেন। এতগুলো আইনবিরুদ্ধ কাজ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতা। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলাই হয়নি।

অথচ আইন অনুযায়ী নুর ইসলামের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করার সুযোগ আছে। বন বিভাগের একটি মামলা করার কথা থাকলেও তারা গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নুর ইসলাম কি এতটাই প্রভাবশালী যে তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ, পাউবো ও পরিবেশ অধিদপ্তর জোরালো কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে না? এমন পরিস্থিতিতে আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতি কতটা সুরক্ষা করা সম্ভব, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।