মনোহরগঞ্জবাসীর অপেক্ষার অবসান হোক

সম্পাদকীয়

সড়ক ছাড়াই ধু ধু মাঠের মধ্যে তৈরি হয়েছে সেতু—ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে পতন হওয়া হাসিনা সরকারের আমলে এ রকম সংবাদ সংবাদমাধ্যমে বারবার শিরোনাম হয়েছে। সরকারি প্রকল্পে জনগণের করের অর্থ এভাবে অপচয় করে কারও কারও পকেট ভর্তি করাটাই অবকাঠামো খাতের নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ও অসাধু সরকারি কর্মকর্তারা। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে গুচ্ছের টাকা পানিতে ফেলা হলেও নাগরিকের জন্য অতি দরকারি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি।

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে একটি সেতুর জন্য যুগের পর যুগ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপজেলার উত্তর ফেনুয়া ও উত্তর হাওলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ডাকাতিয়া নদীর একটি শাখা। শাখা নদীটিও স্থানীয় লোকজনের কাছে ডাকাতিয়া খাল হিসেবে পরিচিত। খালটির পূর্ব পাড়ে উত্তর ফেনুয়া আর পশ্চিম পাশে উত্তর হাওলা গ্রাম। স্বাধীনতার পর থেকেই এই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয় মানুষের। কিন্তু অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষের সেই অপেক্ষার শেষ হয়নি। ফলে ওই স্থানে বাঁশের সাঁকোতে চলাচলে উপজেলার অন্তত ছয়টি গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ডাকাতিয়া খালের ওপর ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিবছর সাঁকোটি পুনর্নির্মাণ করেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শেষে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের। শিক্ষার্থীদের সেতুটি পেরিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে যেতে হয়। বর্ষার সময় কতটা ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সেতু পেরিয়ে পড়তে যেতে হয়, তার আঁচ পাওয়া যায়  মাদ্রাসাশিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলামের বক্তব্যে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির সময় ছাতা ও বই নিয়ে বিপদে থাকি। হাতে ছাতা ধরব, নাকি বই ধরব; নাকি বাঁশের সাঁকো ধরে খালটি পার হব।’

মনোহরগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানাচ্ছে, ডাকাতিয়া খালের ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সেতুটি নির্মাণের ব্যাপারে মনোযোগ দেবে। সেতুর জন্য এলাকাবাসীর ৫০ বছরের অপেক্ষা অবসান হওয়া প্রয়োজন।