মানুষকে ঘিরে যে প্রকৃতি ও পরিবেশ, সেখানে শুধু মানুষই বাস করে না। কিন্তু মানুষ ছাড়া বাকিদের নিয়ে আমাদের ভাবনা, নীতি ও পরিকল্পনা কই? সেটি থাকলে তো রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বিষ মেশানো খাবার খাইয়ে কুকুর হত্যার ঘটনা ঘটত না। চিড়িয়াখানায় বন্দিদশায় থেকে ধুঁকে ধুঁকে মরত না অনেক প্রাণী। সেদিক দিয়ে ময়মনসিংহের একটি সংগঠন বেওয়ারিশ কুকুরের কথা যেভাবে ভেবেছে, তা প্রশংসনীয়।
শহরগুলোতে খেয়ে না খেয়ে নিরুপায় হয়ে পড়ে থাকে অসংখ্য কুকুর। শীতের দিনে এসব কুকুরের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। শহরের ফুটপাতে ছিন্নমূল মানুষই যেখানে শীতে নিদারুণ কষ্টে থাকে, সেখানে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর কথা ভাবার অবকাশ কার আছে। ময়মনসিংহে তাদের কথা ভেবে এগিয়ে এসেছে ‘পরম্পরা’ নামের একটি সাহিত্য সংগঠন। ময়মনসিংহ শহরের অনেকগুলো বেওয়ারিশ কুকুর বাচ্চা প্রসব করেছে। শীতের রাতে আশ্রয়হীন এসব কুকুরের কষ্ট উপলব্ধি করে তাদের জন্য বানানো হয়েছে ঘর। ঘরের ভেতরে রাখা হয়েছে খাবার। ঘরের সামনে লিখে রাখা, ‘অরণ্যচারী মানুষের প্রথম বন্ধু কুকুর। বন্ধুর যত্ন নিন। তাকে ভালোভাবে থাকতে দিন।’
ময়মনসিংহ নগরের অতুল চক্রবর্তী রোড, মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকা, বিদ্যাময়ী স্কুল এলাকা ও আমলাপাড়া এলাকায় কুকুরের জন্য চারটি ঘর স্থাপন করা হয়েছে। সাহিত্য সংগঠনটির উদ্যোক্তারা বলেন, রাতবিরাতে শহরে ঘুরতে–ফিরতে দেখা যায় যে কুকুরগুলো, সেগুলো এদিক–সেদিক ডাকাডাকি করে। শহরের স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, বাসাবাড়ি—সবকিছুই এখন তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ফলে কারও আঙিনায় কুকুর ঢুকতে পারে না। শীতের রাতে বাচ্চাগুলোর খুব কষ্ট হয়। এ চিন্তা করেই রাত পাহারা দেওয়া বন্ধু কুকুরের জন্য আশ্রয় স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি জায়গায়।
আমাদের শহরগুলো যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে মানুষের বসবাসই কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে বেওয়ারিশ কুকুর–বিড়ালের আশ্রয় কোথায় হবে, তা ভাবনার মধ্যে আনাটা আরও বেশি কঠিন। এমন বাস্তবতায়ও কিছু মানুষ এসব প্রাণীর কথা ভাবে, এটি অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। আমরা দেখি, নাগরিক সমাজের অনেকেই আছেন, যাঁরা রাস্তায় বা ফুটপাতে কুকুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন। করোনা মহামারির দুঃসময়ে এ মহতী কাজে অনেকে এগিয়ে এসেছিলেন। সম্প্রতি আমরা পর্যটকশূন্য থাকা সেন্ট মার্টিনের কুকুরগুলোর ক্ষেত্রেও তেমনটি দেখেছি। প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা এভাবে জারি থাকুক। ময়মনসিংহের পরম্পরা সাহিত্য সংগঠন ও সংগঠকদের আমরা অভিবাদন জানাই। তাদের মতো করে অন্যান্য শহরেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হোক।