ইসির তদন্ত কতটা ফল দেবে

সম্পাদকীয়

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ তালিকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়াও আছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১২৬ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশের পাঁচ উপপরিদর্শক (এসআই)। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের শীর্ষ পদাধিকারী যথাক্রমে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার কেন বাদ পড়লেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২৫টিতে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এসব কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ শতাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হলেও কোন প্রার্থীর পক্ষে তাঁরা কাজ করেছেন, সেটি বের করতে না পারেননি তাঁরা। প্রার্থীবিশেষের সমর্থকদের ইন্ধন ছাড়া ইসির ভাষায় ‘সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত অনিয়ম’ হতে পারে না। এটি এই তদন্তের একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

তারপরও নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধা উপনির্বাচনের অনিয়মের দায়ে ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সাধুবাদ পেতে পারে। অতীতে অনেক নির্বাচন ও উপনির্বাচনে গুরুতর কারচুপি-অনিয়ম হলেও কমিশন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কার জন্য চুরি করেছে, সেটা ধরতে না পারলেও চুরিটা ধরেছে। কিন্তু এরপরও যে প্রশ্ন ও সন্দেহ খুবই স্বাভাবিক, তা হচ্ছে তদন্ত কমিটি কি আসলেই অনিয়মের পেছনে কারা তা খুঁজতে চেয়েছে?

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর বিধান অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে ইসি।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের মধ্যে ১২৫ জনের বিরুদ্ধে একই আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবে ইসি। এ ছাড়া একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাঁচ এসআইয়ের বিরুদ্ধে একই আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবে ইসি।

উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে উপনির্বাচনে ভোট ছিল। ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর থেকে সিইসি ও অন্যান্য কমিশনার সিসিটিভিতে সব কটি কেন্দ্রের ভোটের অনিয়ম দেখে পুরো নির্বাচনটি বাতিল করে দেন। এর আগে কোনো সংসদীয় আসনের নির্বাচন বা উপনির্বাচন বাতিল করার ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন যেভাবেই হোক না কেন, দিন শেষে ফল ঘোষণাই ছিল তাদের একমাত্র কর্তব্য। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টির প্রার্থীই ছিলেন সরকারদলীয় প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

গাইবান্ধা উপনির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার পর যে একশ্রেণির কর্মকর্তা কেবল নিজেদের অন্যায় ঢাকার চেষ্টা করেননি, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।

অভিযোগ আছে, সরকার দলীয় প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের ইন্ধনে বেশ কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, ভোটকেন্দ্রে কোনো অনিয়ম ঘটেনি।

উপনির্বাচনের অনিয়মের সঙ্গে যাঁরা জড়িত এবং যাঁরা ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে নির্বাচনব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য কঠোর বার্তা দেবে, সন্দেহ নেই।