চট্টগ্রামের রাউজানে সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ কামাল কমপ্লেক্স নামে একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে এ ভবন নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অধীন। এ কমপ্লেক্সে রয়েছে দুটি মিলনায়তন, একটি গ্রন্থাগার ও রেস্টহাউস। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনবল নিয়োগ না হওয়ায় ভবনটি কোনো কাজে আসছে না।
যে জায়গায় ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আগে পুকুর ছিল। জায়গাটির মালিকানা সড়ক ও জনপথের (সওজ)। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ইচ্ছায় সেখানে কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়। ভবনটির নির্মাণকাজের সবকিছুই হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিমের ইচ্ছেমতো। ভবনটি চালু করতে পাঁচ থেকে সাতজন জনবল দরকার। সেই জনবল নিয়োগের চেষ্টা চলছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
কমপ্লেক্সটি যেহেতু কোনো কাজে আসছে না বা ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাই প্রথমেই যে প্রশ্ন সামনে আসে, তা হলো কমপ্লেক্সটি নির্মাণের আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল কি না। একজন সংসদ সদস্যের ইচ্ছায় জলাশয় ভরাট করে এ রকম একটি ‘অপ্রয়োজনীয়’ স্থাপনা নির্মাণ সরকারি অর্থ অপচয়ের অনেক উদাহরণের একটি।
লক্ষণীয় হলো, এ কমপ্লেক্সের নাম দেওয়া হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাইয়ের নামে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ভাইয়ের নাম ব্যবহার করায় এ রকম ‘অপ্রয়োজনীয়’ স্থাপনাও খুব সহজে সরকারি অনুমোদন পেয়েছে—এমনটা অনুমান করার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার পরিবারের আরও অনেক সদস্যের নামে এ রকম বহু অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা বা ভবন নির্মাণের উদাহরণ রয়েছে।
ভবনটির নির্মাণকাজে ঠিকাদার ছিলেন মেসার্স নূর সিন্ডিকেট-মেসার্স হোসেন এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনজুর হোসাইন। তিনি একটি মামলায় বর্তমানে কারাগারে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম এবং ভবনটির নির্মাণকাজের ঠিকাদার দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক যোগসাজশে লুটপাটের উদ্দেশ্যে অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণের জন্য এ রকম প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, এ ক্ষেত্রে তেমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে।
গত সরকারের আমলে সারা দেশে এ রকম কত ‘অপ্রয়োজনীয়’ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করা প্রয়োজন। জনগণের কাজে আসবে না, এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাঁরা কার্যত লুটপাট চালিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিত।