শিকার ও বিক্রি বন্ধে কঠোর হোন

সম্পাদকীয়

একসময় বঙ্গোপসাগর ছিল হাঙরের স্বর্গরাজ্য। প্রায় ৫০ প্রজাতির হাঙর এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে দেখা গেলেও ২৮ প্রজাতিকে রক্ষিত প্রাণীর তালিকায় আনা হয়েছে দেশের বন্য প্রাণী আইনে। কিন্তু অন্য অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর মতো বঙ্গোপসাগরের হাঙরও হারিয়ে যেতে বসেছে। এর জন্য অতিরিক্ত হাঙর শিকারকেই দায়ী করা হচ্ছে। হাঙর বাঁচাতে আইন থাকলেও এর কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় প্রায়ই জেলেদের জালে হাঙর ধরা পড়ে। আর ঘাটে এনে এসব হাঙর বিক্রি করা হয় উচ্চ মূল্যে। হাঙরের এমন চাহিদার একটি বড় কারণ হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত করে শুঁটকি বিক্রি। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই শুঁটকির চাহিদা ব্যাপক এবং বিক্রিও হয় চড়া দামে। শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় মূলত বাচ্চা হাঙর। আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে হাঙরের পাখনা, চামড়া, দাঁত ইত্যাদি রপ্তানি করা হয় দেশের বাইরে।

দেশে হাঙর সুরক্ষার দায়িত্ব বন অধিদপ্তরের। আইন অনুযায়ী হাঙর শিকার ও বিক্রির অপরাধে শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু সেই অর্থে আইন প্রয়োগ করতে দেখা যায় না সরকারি এ কর্তৃপক্ষকে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটগুলোতে প্রকাশ্যে হাঙর বেচাকেনা করা হলেও এর বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

আইন করে শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলেও দেশ থেকে হাঙর রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী আইন পাসের আগে ১৯৯২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ কেজি হাঙর, হাঙরের পাখনা, হাড়, ফুলকা ইত্যাদি রপ্তানি হয়েছে। এরপর থেকে শুঁটকি করে বেশির ভাগ হাঙর রপ্তানি করা হয়।

তবে গত এক দশকে মোট পাঁচটি চালানে ২ হাজার ৩৬৭ কেজি হাঙরের চামড়া, পাখনা ও দাঁত রপ্তানি হয়েছে। এতে বোঝা যায়, কী পরিমাণ হাঙর দেশের বাইরে চলে গেছে এবং যাচ্ছে, এর জন্য কত হাঙর শিকার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। রপ্তানি নীতির আইন অনুযায়ী, হাঙর শিকারের জন্য সাইটিস সার্টিফিকেট এবং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু হাঙর শিকারে এসব বাধ্যবাধকতা কেউ মানছে কি? এগুলো তদারকও কি করা হয়?

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ বলছে, বিভিন্ন সময় সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক চাহিদা থাকায় কিছু ব্যক্তি হাঙর শিকার করছেন। এ জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।

এখানে আইন প্রয়োগেরও বিষয় আছে। সেটি কেন কার্যকর করা হচ্ছে না, সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের প্রশ্ন। এ কাজে বন অধিদপ্তরের সঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরকেও যুক্ত করা গেলে হাঙর সুরক্ষার বিষয়টি আরও বেগবান হয়। তবে শিকার ও বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি রপ্তানির সুযোগও সীমিত করা জরুরি। নয়তো বঙ্গোপসাগর একসময় হাঙরশূন্য হয়ে পড়বে।