জন্মসনদ নিয়ে ভোগান্তির অবসান হোক

সম্পাদকীয়

নতুন বছর সামনে রেখে সন্তানদের স্কুলে ভর্তির ব্যস্ততা শুরু হয়েছে অভিভাবকদের। কিন্তু জন্মসনদ নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন তাঁদের অনেকে। পাসপোর্ট ইস্যু, বিয়ে নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নানা কাজে জন্মনিবন্ধনের ব্যবহার অনেকটা আবশ্যকীয়। কিন্তু স্কুলের ভর্তির ক্ষেত্রে সন্তানের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও জন্মসনদ দেখাতে হচ্ছে। এতেই তৈরি হয়েছে জটিলতা ও দুশ্চিন্তা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অক্টোবরে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। অনেক বিদ্যালয়ে নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়। জাতীয় শিক্ষানীতি–২০১০ অনুযায়ী, বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিশুর বয়স শনাক্ত করতে আবেদন ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হয় জন্মসনদের ফটোকপি এবং ২০২১ সালের করা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ২০০১ সালের পর জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন করাতে হলে মা-বাবার জন্মসনদ থাকা আবশ্যক। ফলে কয়েক মাস আগে থেকে শিশুর ও নিজেদের জন্মসনদ সংগ্রহে অনেক অভিভাবকের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। অনেক অভিভাবকের জন্মসনদ থাকে না, থাকলেও সন্তানের জন্মসনদের তথ্যের সঙ্গে থাকে তারতাম্য কিংবা বানান ভুল। ফলে এই সময়ে জন্মসনদ সংশোধনের প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে অভিভাবকেরা ভিড় জমাচ্ছেন। সন্তান ও নিজের জন্মসনদ করানো বা সংশোধন করতে একাধিকবার আসতে হচ্ছে তাঁদের। কোনো কোনো কার্যালয়ে এক মাস ধরে ঘুরেও সনদ পাচ্ছেন না। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের জেরে জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে জন্মনিবন্ধনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় মোবাইল ইন্টারনেট-সংযোগ বন্ধ ছিল প্রায় ১০ দিন। সরকার পতনের পর বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের অফিস আক্রান্ত হয়। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। এসব কারণে সেপ্টেম্বর থেকে অনেক জায়গায় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোকেও।

কথা হচ্ছে, ডিজিটাল ব্যবস্থা বা অনলাইন–সুবিধা থাকা সত্ত্বেও জন্মসনদ নিয়ে কেন বারবার ধরনা দিতে হবে? ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসে যেখানে এ কাজ সমাধা হওয়ার কথা, সেখানে কেন আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা প্রশাসনে দৌড়াতে হচ্ছে অনেককে? কাউকে কাউকে এমন প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হচ্ছে, এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে জন্মসনদ পেতে। এ দীর্ঘসূত্রতার কারণে কোথাও কোথাও বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগও আছে। আরও গুরুতর প্রশ্ন, সন্তানের জন্মসনদের জন্য কেন অভিভাবকেরও জন্মসনদ জমা দিতে হবে? অভিভাবকত্ব প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স কেন যথেষ্ট নয়?

আমরা আশা করব, স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। এতে অভিভাবকদের ভোগান্তি নিরসন যেমন কমবে, সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের চাপও নিরসন হবে।