বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয়েছে। মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তুলকালাম হওয়ার ঘটনাও কম নয়। অনেক যাচাই–বাছাইয়ের পর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়েছে, যার সুফল মেধাবী শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন।
এমবিবিএস ভর্তিতে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বাতিল করার জন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মালিকেরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চাপ দিচ্ছেন বলে প্রথম আলোর খবরে জানানো হয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলেছে, অটোমেশন একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি, এটি বাতিল করতে হবে। ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে দেওয়া চিঠিতে সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, বেসরকারি মেডিকেলের মতো ব্যয়বহুল শিক্ষায় যাঁরা পড়তে ইচ্ছুক, তাঁরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে নিজেদের পছন্দের কলেজে পড়তে চান। অটোমেশনের কারণে অর্থ থাকলেও পছন্দের কলেজে অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না। অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করে আগের ব্যবস্থায় ফিরে গেলে শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সুবিধা হবে।
উল্লেখ্য, দেশে মেডিকেল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি। এ ছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে। ভালো কলেজে ভর্তি হন তালিকার ওপরে থাকা শিক্ষার্থীরা।
এমবিবিএস ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সুনির্দিষ্টভাবে দিন ঠিক না হলেও আগামী জানুয়ারি মাসে এই পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার এক মাস পর বিডিএসের (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) ভর্তি পরীক্ষা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, মেধার ভিত্তিতে কলেজ পছন্দ করা মেডিকেল শিক্ষার মৌলিক বিষয়। অটোমেশনে মেধাবীদের ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কারও সরে আসা উচিত হবে না।
গত এক দশকে এমবিবিএস ভর্তিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে। এই পদ্ধতিতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দের কলেজগুলো বেছে নিতে পারেন। এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির কারণে মেধাতালিকার নিচের দিকে থাকা শিক্ষার্থীদের পক্ষে মানসম্পন্ন সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়। সে সময় সামনের সারিতে থাকা বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছিল।
অটোমেশন পদ্ধতি চালুর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খলা চলছিল, সেটা কারও অজানা নয়। তখন অনেক বেসরকারি কলেজে মেধাতালিকার নিচের দিকে থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাত মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান অটোমেশন বাতিল করার পক্ষে যে যুক্তি দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন খালি থাকছে অটোমেশনের কারণে নয়। খালি থাকছে মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে না পারার কারণে।
আমরা মনে করি, ভর্তির স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিই বহাল থাকা উচিত। ভর্তি পরীক্ষা পুরোনো পদ্ধতিতে নিয়ে গেলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকেরা লাভবান হলেও শিক্ষার সর্বনাশ ঘটবে।