স্বেচ্ছাসেবীদের পরিশ্রম যেন বৃথা না যায়

সম্পাদকীয়

সম্প্রতি পূর্বাঞ্চলের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার প্রধানতম কারণ হচ্ছে দ্রুত পানি নামতে না পারা। এখনো লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। আর পানি নামতে না পারার একটাই কারণ, দখল ও দূষিত হয়ে নদী-খাল-বিলের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে নদী–খাল–বিলগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। বন্যাকবলিত জেলা লক্ষ্মীপুরের একটি খাল পুনরুদ্ধার করে সে কাজটি করেছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা। এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বীরেন্দ্র খাল প্রবাহিত। দুই যুগ ধরে দখল–দূষিত হয়ে খালটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই অর্থে খালটি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট ছিল না। দিন শেষে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও তরুণ–যুবকেরা এগিয়ে এলেন। ১৫ দিন ধরে খালটির প্রায় দুই কিলোমিটার স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নিজেদের অর্থে স্বেচ্ছাশ্রমে পরিষ্কার করেছেন তাঁরা। রামগঞ্জ ব্লাড ডোনারস ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এ জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনকেও সাধুবাদ জানাই।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দীর্ঘদিন বর্জ্য জমে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ ছিল। এতে খালের ভেতর বাঁশের খুঁটি পুঁতে অবৈধ ঘর তুলেছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন। সামান্য বৃষ্টি হলেই খালের পাশে গড়ে ওঠা বাগানবাড়ি ও বস্তির ঘরগুলো ময়লা পানিতে ডুবে যায়। তবে এর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবীরা ময়লা অনেকটা পরিষ্কার করায় পানিপ্রবাহ বেড়েছে। তবে খাল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবীরা আশা প্রকাশ করছেন, পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে এলে দুর্গন্ধ কমে আসবে।

একসময় খালের পানিতে সব বয়সী মানুষেরা গোসল করতেন। ঘরের কাজেও খালের পানি ব্যবহার করা যেত। খালে ছোট-বড় অনেক নৌকাও চলাচল করত। কিন্তু দেড় যুগের বেশি সময় ধরে দখল ও দূষণের কারণে ঐতিহ্যবাহী খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধের কারণে খালের কাছে দাঁড়ানো যায় না। এখন খালটি পরিষ্কার করায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও তরুণ-যুবকদের এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবীদের এমন উদ্যোগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আমরা আশা করব, খালটি যেন আগের অবস্থায় ফিরে না যায়। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী তরুণদেরই এই সফলতা ধরে রাখতে হবে। জেলার অন্য খালগুলোও এমন যৌথ উদ্যোগে পুনরুদ্ধার করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।