শিক্ষার্থীরা কেন খেসারত দেবেন

সম্পাদকীয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে কমিটি গঠনের খবরটি ইতিবাচক। সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এই কমিটি সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে।

২০১৭ সালে সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল হঠকারী ও জবরদস্তিমূলক। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে পারছে না, সেখানে তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি ছিল অন্যায্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত।

এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। উল্লিখিত সাত কলেজের বাইরেও তো অনেক ভালা মানের কলেজ আছে। প্রকৃতপক্ষে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে একটা দুরভিসন্ধি ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে।

উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের দায়িত্ব নিলেও তারা যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। এর বিরুদ্ধে দফায় দফায় আন্দোলন ও রাজপথে সংঘর্ষ হয়েছে। সময়মতো পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন এই ভেবে যে তাঁদের শিক্ষার মান বাড়বে। বাস্তবে ফল হয়েছে উল্টো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ যথাসময়ে হলেও সাত কলেজের পরীক্ষা আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল না থাকায়।

এ প্রেক্ষাপটে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকতে আগ্রহী নন। তাঁরা আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করছেন। কয়েক মাস ধরে তাঁদের কর্মসূচির কারণে কিছুদিন পরপর নিউমার্কেট এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কমিটিতে তাঁদের প্রতিনিধি রাখার দাবি জানিয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কমিটির কার্যপরিধি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলেছেন, কমিটির কার্যপরিধিতে সংস্কারের কথা থাকলেও তাঁদের দাবি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।

গত সাত বছরে দেশের সাতটি সেরা কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যে ব্যাহত হলো, এর জবাব কী। সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত হননি; ব্যক্তির খেয়ালখুশি অনুযায়ী তাঁদের ওপর এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যতই দিন যাবে, সমস্যা তত বাড়বে। শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবি ও সরকারের সামর্থ্যের সমন্বয়েই সংশ্লিষ্টদের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আগের সরকারের একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর খেসারত দেবেন, সেটা কোনোভাবে কাম্য নয়। প্রয়োজনে যঁারা এই অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তঁাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।

যাঁদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তবে কমিটিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নেই। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। আমরা আশা করব, কমিটির সদস্যরা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলবেন। কমিটি বা সরকারের এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে শিক্ষার্থীদের আবার আন্দোলনে নামতে হয়। তাঁরা যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, সেটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে করাই সমীচীন হবে।