গত তিন দিনের বৃষ্টিতে মহানগরী চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। এমনকি সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ির আঙিনা ও পাশের সড়কেও হাঁটুপানি জমতে দেখা গেছে। অনেক এলাকায় নৌকাই প্রধান বাহন হয়েছে নগরবাসীর।
প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যায়। বর্ষার সঙ্গে জোয়ারের পানি মিশে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। যে শহর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ও যাকে বাণিজ্যিক রাজধানীর বাহারি শিরোপা দেওয়া হয়েছে, সেই শহরের এ অবস্থা দেখেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের টনক নড়ে না।
জলাবদ্ধতার জন্য সরকারের এক সংস্থা অন্য সংস্থার ওপর দায় চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করে। আর জনগণকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেক পুরোনো। চট্টগ্রাম শহরে একসময় আড়াই হাজার খাল ও নালা ছিল, যা দিয়ে শহরের পানি নদীতে নেমে যেত। কিন্তু দীর্ঘদিনের দখল ও দূষণের কারণে সেই খালের বেশির ভাগই ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে জোয়ারের সময় সাগরের পানি এসে শহরে ঢুকে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেছে। ফলে অল্পতেই জোয়ারের পানি এসে শহরে প্রবেশ করে।
সে ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা দূর করতে খাল ও নালাগুলো যেমন পুনরুদ্ধার করতে হবে, তেমনি সমুদ্রের পানিপ্রবাহ ঠেকাতে জলকপাট তৈরি করতে হবে। ১৯৬৯ সালে একটি বিদেশি কোম্পানি জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা দিয়েছিল, যা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ১৯৯৫ সালে সরকারের পক্ষ থেকে আরেকটি মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু পরিকল্পনার কাজ কে ও কীভাবে করবে, সেসব ঠিক করতেই অনেক সময় চলে যায়। প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ৬ থেকে ১০ বছর আগে।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন সংস্থা চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। উল্লিখিত তিন সংস্থা হলো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই তিন সংস্থার কাজেও সমন্বয়হীনতা আছে বলেও অভিযোগ আছে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও সিডিএ পরস্পরকে সহায়তা না করলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সমন্বয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে কাজ চলে ঢিমেতালে। এ ক্ষেত্রে সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও পাউবোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ আছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। কাজটি কার নেতৃত্বে হয়েছে, সেই তর্কের চেয়ে দ্রুত শেষ করাই জরুরি।
মহাপরিকল্পনা নেওয়ার পর ইতিমধ্যে ২৮ বছর চলে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর মানুষের দুর্ভোগ ছাড়াও অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং চট্টগ্রাম শহরকে মোটামুটি বাসযোগ্য রাখতে অবিলম্বে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করি।
পানিনিষ্কাশনের জন্য খাল খনন কিংবা জোয়ারের পানি আটকে দেওয়ার জন্য যে জলকপাট নির্মাণ করা প্রয়োজন, তার কোনোটি অপূর্ণ থাকলে পরিস্থিতির উন্নয়ন আশা করা যায় না। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, জলাধার রক্ষা করতে না পারলে রাস্তাঘাটসহ পুরো শহরই জলাধার হয়ে যাবে।