শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলা বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

আমাদের নদী, পানি, মাটি, বাতাস—সবকিছুই বিষিয়ে উঠছে। একটি দেশের প্রাণ-প্রকৃতি ও জনজীবনের জন্য এর চেয়ে অশনিসংকেত আর কী হতে পারে। কিন্তু এসব রক্ষায় রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণ কী করছে?

একের পর এক নদী বিনষ্ট হচ্ছে, দখল ও দূষণ হতে হতে মৃতপ্রায়। এসব নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন, মতামত, সম্পাদকীয় প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে হতাশাজনক চিত্রই থেকে যাচ্ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে। তা না হলে যে নদী একসময় মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল এ দেশে, সেই নদীতে কীভাবে মরা মাছ ভেসে ওঠে?

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফুলজোড় নদের বিভিন্ন অংশে সম্প্রতি মরা মাছ ভেসে উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিল্পকারখানার বর্জ্য সরাসরি নদটিতে ফেলার কারণেই এ দশা।

এ দেশের শিল্পকারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব করা যাচ্ছে না, সেই ব্যর্থতার ভার বহন করতে হচ্ছে আমাদের নদ–নদীগুলোকে, তার সাম্প্রতিক নজির হতে পারে এ ফুলজোড় নদ। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

পত্রিকার সরেজমিন প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শুধু মাছ নয়; সাপ, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। উপজেলার রায়গঞ্জ পৌরসভার ধানগড়া, রণতিথা, মহেশপুর ও চান্দাইকোনা ইউনিয়নের বেড়াবাজুয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অজস্র মাছ মরে ভেসে উঠছে।

এলাকার ছেলেমেয়েসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেই মাছ ধরছেন। এমনকি নদের পানির রং বদলে গেছে। ফলে স্থানীয় যেসব মানুষ নদটিতে নিয়মিত গোসল করে আসছেন, ভয়ে তাঁরা এখন নদে নামতে চাইছেন না। গৃহবধূরাও গৃহস্থালির কাজের জন্য নদের পানি ব্যবহার করছেন না।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, উজানে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্য নদে ফেলায় পানি দূষিত হয়ে গেছে। সেখানকার পরিবেশকর্মীদের ভাষ্য, শেরপুর ও রায়গঞ্জ উপজেলার সচেতন মানুষ প্রতিবাদ ও আন্দোলন করলেও নদদূষণ বন্ধ হয়নি।

রায়গঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. আবদুল্লাহ আল পাঠান বলেন, প্রতিবছরই এমন সময় উজানের দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্যে নদের মাছসহ জলজ প্রাণী মরে যায়। কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো বিহিত হচ্ছে না।

যদিও শিল্পকারখানাগুলোর দাবি হচ্ছে, বর্জ্য শোধন করেই নদ–নদীতে ফেলা হয়। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, পরিবেশকর্মীদের ভাষ্য ও পৌর মেয়রের বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে ফুলজোড় নদের দূষণের জন্য কারখানাগুলোর বর্জ্যই দায়ী।

শিল্পকারখানাগুলোতে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইটিপি প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধ্যতামূলক হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই তা করে না বা করতে চায় না। খরচ বাঁচাতে বা অধিক মুনাফা করতে গিয়ে এ দেশের প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছে তারা। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সম্মিলিত ও জোরদার ভূমিকা রাখবেন।