আদালতের আদেশ কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় না? যদি পৌঁছাত এবং যদি কর্তৃপক্ষ সেই আদেশ বাস্তবায়নে কাজ করত, তাহলে কি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে স্কুলছাত্র রাজপ্রতাপ দাসকে মরতে হতো? প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, রোববার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রাজপ্রতাপ ও তার বন্ধুরা জন্মদিন উদ্যাপনের জন্য জড়ো হয়েছিল।
তারা জন্মদিনের কেক কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ আরও কয়েকজন তাদের এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এক শিক্ষক রাজপ্রতাপের বুকে হাঁটু দিয়ে আঘাত করেন। বাড়ি ফিরে সে বমি করতে থাকে। নলতা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজপ্রতাপের মৃত্যু নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্য দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মোনায়েম ও নলতা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল ফজল মাহমুদ। প্রধান শিক্ষক মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, রাজপ্রতাপ আত্মহত্যা করেছে। অন্যদিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেছেন, প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হয়নি সে আত্মহত্যা করেছে।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই রাজপ্রতাপ আত্মহত্যা করেছে, নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি এর দায় অস্বীকার করতে পারেন? নাকি আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া কোনো অপরাধ নয়?
জন্মদিনের এই আয়োজনে তো শিক্ষকেরাও যোগ দিতে পারতেন। ছাত্র-শিক্ষকের যে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর মায়ার সম্পর্ক, তা এতে আরও গভীর হতো। অথচ স্কুলের এই শিক্ষকেরা ঠিক বিপরীত কাজটাই করলেন।
অথচ ২০১১ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দুটি মানবাধিকার সংগঠনের রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দিয়েছিলেন তাঁরা। এরপরও ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চলছে। পরিবারের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা।
অথচ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ফেনীর নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল; কটুকথা সহ্য করতে না পেরে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী অরিত্রীকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছিল এবং ফেনীর দাগনভূঞা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল।
সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিতে সরকার অনেক বছর ধরেই কাজ করছে। পড়ালেখার মানোন্নয়ন কতটুকু হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা আছে। তবে এত এত শিশু-কিশোরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা দিতে না পারাটা সরকারের ব্যর্থতা।
জেলা-উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তারা যদি তাঁদের দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে নিয়মিত বিরতিতে এমন ঘটনা ঘটত না। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়িয়ে শিক্ষার হার হয়তো অঙ্কের মারপ্যাঁচে বাড়বে। তবে মানবিকতার চর্চা না থাকলে সব উদ্যোগই বৃথা।