স্থবির বর্জ্য সংগ্রহ

কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ–সহিংস পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ২০২৪) সন্ধ্যার পর থেকে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪) রাত থেকে সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু করা হয়। এ কয়দিনের প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকার সম্পাদকীয়, লেখা ও সাক্ষাৎকার ধাপে ধাপে অনলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই ২০২৪) এ সম্পাদকীয় ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ–সহিংস পরিস্থিতি গোটা দেশে বহুমুখী প্রভাব ফেলেছে। পণ্য পরিবহন, বাজারব্যবস্থা, পর্যটন খাত, সেবা খাতসহ অনেক কিছুই অনেকটা থমকে গেছে। বিশেষ করে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখায় আরও বেশি সংকট তৈরি হয়েছে। রাজধানীতে আরও একটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যা গুরুতর। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। আবর্জনা সংগ্রহ ও জমার কেন্দ্রগুলোতে ময়লা উপচে পড়ছে। এর ফলে নাগরিকদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য নানা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সংঘর্ষ–সহিংসতায় সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও গাড়ি হামলার শিকার হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের কয়েকটি কার্যালয় এবং অনেকগুলো ডাম্প ট্রাক ও কর্মকর্তাদের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এমন ক্ষয়ক্ষতিতে নিঃসন্দেহে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিরূপ প্রভাব পড়ার কথা এবং সেটিই ঘটেছে। গত কয়েক দিনে অনেক এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে ময়লা নেওয়া হচ্ছে না। ময়লা সংগ্রহের কর্মীরা না আসায় অনেকে বাসাবাড়ির ময়লা রাস্তায় ফেলে এসেছেন। আবার সিটি করপোরেশনের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএ) থেকে কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে বর্জ্য স্থানান্তরও থমকে আছে। ফলে এসটিএসগুলোর বর্জ্য সড়কে উপচে পড়ছে। 

সমকাল এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শান্তিনগর, মালিবাগ, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, আজিমপুর, রামপুরা, বাড্ডা, দয়াগঞ্জ, শেওড়াপাড়া এলাকার প্রতিটি এসটিএসে ময়লা–আবর্জনা উপচে পড়ে মূল সড়কে এসে পড়েছে। এমনকি ময়লার পানি সড়কের মধ্যে পড়ে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। তার মানে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিশাল একটি এলাকায় বর্জ্য অপসারণে অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। এ সমস্যা সাময়িক হলেও দুর্ভোগ ও ভোগান্তির বিষয়টি সীমাহীন। এ ছাড়া ডেঙ্গুর মৌসুম হওয়ায় বিষয়টি আরও বেশি উদ্বেগজনক।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, করপোরেশনের সম্পত্তির নিরাপত্তায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও কোনো কোনো এলাকায় গত রোববার থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সম্পত্তির নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করলেও সিটি করপোরেশন কেন বিকল্প ব্যবস্থা নিল না, সেটি আমাদের প্রশ্ন। সিটি করপোরেশনের বিপুলসংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাহিনী আছে, তঁাদের কেন জরুরি ভিত্তিতে কাজে লাগানো হলো না? ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, তারা যেন জমে থাকা বর্জ্য অপসারণে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে।