সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপুল উন্নয়ন ঘটেছে। বড় মেগা প্রকল্পসহ অজস্র সেতু-কালভার্ট আর সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতে অনেক এলাকার আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির দুয়ার খুলে গেছে। তবে যোগাযোগ খাতের এই উন্নয়নে গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে সড়ক দুর্ঘটনা। দেশের সড়কগুলোতে হরহামেশা আমরা মৃত্যুর মিছিল দেখতে পাচ্ছি।
সড়কগুলো মৃত্যুফাঁদ হয়ে ওঠার পেছনে চালকের অসতর্কতাসহ কিছু কারণ আমরা ঘুরেফিরে আসতে দেখি। তবে সড়ক নির্মাণে ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনা, ভুল পরিকল্পনা ও দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়টিও যে এর জন্য দায়ী, সেটি অনেকটা আড়ালে থেকে যায়। প্রকৌশলগত ও পরিকল্পনামাফিক নির্মাণের মধ্য দিয়ে একটি সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে সেখানে পরিবহন চালনায় যতই শৃঙ্খলা থাকুক না কেন, দুর্ঘটনা হতে বাধ্য।
দেশে এমন ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক অনেক। খুলনায় এ রকম আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। সেখানে একটি সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি বাঁক সোজা না করেই প্রকল্পের কাজ বুঝিয়ে দিতে চায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০২০ সালে কয়রা উপজেলা থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও বাঁক সোজা করার কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কয়েক দফা মেয়াদ বেড়ে বরাদ্দ বাড়ে ৪০ কোটি টাকা।
কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা না করেই প্রকল্পটি শেষ করতে চায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে উদ্দেশ্যে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়, সেটিই যদি পূরণ না হয়, তাহলে এত অর্থ খরচের তো কোনো মানে হয় না। এখন সড়কটিতে যাতায়াতকারী চার উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকেই যাবে।
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করার জন্য জমি অধিগ্রহণের কথা ছিল। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এরপরও সেই জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি। এখন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণই যদি না হয়, তাহলে কেন সেটি শুরু করা হলো?
যেভাবেই হোক ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়াটাই কি মুখ্য ছিল এখানে? ওই সড়কের কোনো কোনো জায়গায় ৯০ ডিগ্রি কোণের বিশাল বাঁক রয়েছে। সড়কটি প্রশস্তকরণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো ঠিক করতে প্রায় দুই যুগ ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন ওই অঞ্চলের মানুষ। দেরিতে একটি প্রকল্প শুরু হলেও তাঁদের সে দাবি পূরণ হচ্ছে না।
খুলনা সওজ কার্যালয়ের ভাষ্য, প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আর প্রকল্প থেকে বাঁক সোজা করার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে এমনটি নয়। এ জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসকও এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
আমরা তাঁদের কথায় আস্থা রাখতে চাই। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করেই প্রকল্পটি শেষ হোক।