সবার সংবিৎ ফিরে আসুক

সম্পাদকীয়

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ব্যবসায়ীরা সেখানে খোলা জায়গায়ই চৌকি বসিয়ে বেচাকেনা শুরু করেছেন। এর পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। যদিও তাতে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা কম। মার্কেটের পাঁচ হাজার ব্যবসায়ীর দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনে ঢাকার মার্কেটগুলোর যে চালচিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। কেবল বঙ্গবাজার নয়, নতুন-পুরোনো অনেক মার্কেটই ঝুঁকিপূর্ণ। বঙ্গবাজারের ঝুঁকি সম্পর্কে অনেকবার নোটিশ দেওয়ার পরও ব্যবসায়ীদের সজাগ না হওয়া কিংবা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর জানা গেল, রাজধানী সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটও ঝুঁকিপূর্ণ। ফায়ার সার্ভিস ঢাকার সাত-আটটি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ফায়ার সার্ভিস অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিটাই চিহ্নিত করে থাকে। অবকাঠামো ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির লাইনের ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য আলাদা সংস্থা আছে। পুরান ঢাকার অনেক ভবনের অবস্থা, তা মার্কেট হোক আর বসতবাড়ি—মাথার ওপর বাড়ি পড়ো পড়ো। সম্প্রতি সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে দুর্ঘটনা ঘটেছে মেঝের নিচের গ্যাসলাইন থেকে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান একটি বার্তা সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, ঈদের ঠিক পর ঢাকার কিছু বিপণিবিতান বন্ধ করে দেওয়া হবে। একটি বা দুটি বিপণিবিতানকে অনিরাপদ মনে করি এবং সেখানে আকস্মিক দুর্ঘটনা (ডিজাস্টার) ঘটতে পারে। তাদের বিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’ অবশ্য তিনি কোনো মার্কেটের নাম বলেননি।

দেশের কলকারখানাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের গঠিত বহুপক্ষীয় জাতীয় কমিটি সারা দেশে পাঁচ হাজারের বেশি কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠানকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে। এই কমিটির প্রধান সালমান এফ রহমান।

সরকারের পক্ষ থেকে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া কতটা সম্ভব হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের নিজেদের স্বার্থেই মার্কেট নিরাপদ রাখতে কাজ করতে হবে। কেননা মার্কেটে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তঁারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বঙ্গবাজারে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটল, তাতে সিটি করপোরেশন ও রাজউকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের দায়ও কম ছিল না। মার্কেট কর্তৃপক্ষকে ১০ বার নোটিশ দেওয়ার পরও নির্বিকার থাকা দুর্ঘটনাকে সাদর সম্ভাষণ জানানো ছাড়া কিছু নয়।

ফায়ার সার্ভিস রাজধানী সুপার মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর মার্কেট কর্তৃপক্ষ কিছুটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে কিছু প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে; যার মধ্যে আছে দুই লাখ লিটার পানি মজুত করা যায়, এমন ট্যাংক নির্মাণ। বঙ্গবাজার মার্কেটের আগুন নেভাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে পানি আনতে হয়েছে। কিন্তু রাজধানী সুপার মার্কেট কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ ঝুঁকি কতটা কমাবে, সেটা বিচার-বিবেচনা করে দেখতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, কেবল অগ্নিঝুঁকিমুক্ত হলেই মার্কেট নিরাপদ হবে না। এ জন্য টেকসই অবকাঠামো ও পরিষেবার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো নজরদারি করছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। অনেক সময়েই দেখা যায়, কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই; অর্থাৎ কাগজপত্রে মার্কেট পরিদর্শনের কথা থাকলও বাস্তবে তা করা হয় না। তবে নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন, এটাই প্রত্যাশিত।