২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও বিপদ আরও বাড়বে

গত বুধবার মন্ত্রিসভায় ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। এতে সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারায় সাজা কমানো ও দুটি ধারা অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের অন্তত ১২টি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। 

বর্তমানে আইনের ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারা অজামিনযোগ্য। প্রস্তাবিত আইনে ৮৪ ও ৯৮ ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরযান চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের দণ্ডের কথা আছে। এই ধারায় মোটরযানের মালিককে বিমা করতে বলা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে যখন সরকার সড়ক পরিবহন আইনটি পাস করে, তখন থেকেই সড়ক পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করে আসছিল। আইনের বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে রাখতে তারা ধর্মঘটও পালন করে। এই ধর্মঘটে শ্রমিক ও মালিকদের পক্ষে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ সে সময় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। মন্ত্রী হয়ে সরকার প্রণীত আইনের বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নিতে পারেন না। নিলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেই করতে হয়। 

পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সরকার আইনটি সংশোধনের জন্য ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের সমন্বয়ে একটি গঠন করে। কমিটির কাছে আইনের ২৯টি ধারা সংশোধনের দাবি করেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। এর মধ্যে ১০৫, ৮৪ ও ৯৮ ধারাও ছিল। সড়ক পরিবহন আইনের সবচেয়ে কঠোর ধারা হচ্ছে ৮৪, ৯৮ ও ১০৫। এগুলো অজামিনযোগ্য অপরাধ। প্রস্তাবিত আইনে ৮৪ ও ৯৮ ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।

একদিকে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহন আইন করা, অন্যদিকে শ্রমিক ও মালিকদের চাপে সেটি ঠেকিয়ে রাখা সরকারের স্ববিরোধী নীতি ছাড়া কিছু নয়। এ কারণে আইনটি সাড়ে পাঁচ বছর ধরে প্রায় অকার্যকর হয়ে থাকে। যদিও একই সময়ে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি দ্রুত কার্যকর হয় অংশীজনদের আপত্তি সত্ত্বেও। 

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে সরকার নিজেই তার আগের অবস্থান থেকে পিছু হটল। আইনটি মালিক বা শ্রমিকের বিরুদ্ধে ছিল না; দুর্ঘটনা রোধই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা এটিকে দেখছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র’ হিসেবে। 

যখন রোড সেফটি কোয়ালিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন সড়ক সুরক্ষার জন্য নতুন আইন করার দাবি জানিয়ে আসছে, তখন ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইনটি সংশোধনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর যে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেটা কেবল ওই পরিবারগুলোর ক্ষতি নয়; রাষ্ট্রেরও বড় ক্ষতি বলে মনে করি। তবে সত্য যে কেবল আইন করে কিংবা কাউকে শাস্তি দিয়ে দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। এটা বন্ধ করতে হলে সড়ক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নয়ন জরুরি। এ ক্ষেত্রে পরিবহনমালিক, শ্রমিকদের চেয়েও কর্তৃপক্ষের দায় বেশি। বৈধ ছাড়পত্র ছাড়া সড়কে যানবাহন নামা বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।

আইন নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আইন প্রয়োগে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা। সড়ক পরিবহন আইন শিথিল করাকে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ তাদের বিজয় ভাবলে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়বে, যা কারোই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, সড়কে শৃঙ্খলা এলে কিংবা দুর্ঘটনা রোধ হলে যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি এই খাতের মালিক ও শ্রমিকেরাও নিরাপদ থাকবেন।