সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটি করা যায়নি। এ কারণে এবারও হাওরে বাঁধের কাজ যথাসময়ে শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে ফসলহানির ঝুঁকি এবারও থাকছে।
সুনামগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ছোট-বড় ৪৬টি হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। নীতিমালা অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত পাঁচ থেকে সাত সদস্যের কমিটির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসেও জেলার বিভিন্ন হাওরে বাঁধ নির্মাণের জন্য জরিপকাজ চলছে। নভেম্বর মাসে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষের সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু কোনো বছর নির্ধারিত সময় কাজ শেষ হয়েছে, এমন উদাহরণ নেই।
গত এপ্রিলের অকালবন্যায় সুনামগঞ্জে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানির পর সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের প্রাথমিক প্রক্রিয়া অক্টোবরে শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো অনেক হাওরে পানি রয়েছে। এ বাস্তবতায় যেখানে সম্ভব, সেখানে পিআইসি গঠন করে নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হবে। তবে এভাবে একেক জায়গায় একেক সময়ে কাজ শুরু হলে সেটা হবে লোকদেখানো—হাওর রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই তাগাদা দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয় না। সংকটকালে প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তারা যেসব কথা বলেন, সংকট কেটে গেলে সেটি তাঁরা ভুলে যান। এ কারণে ফসল নিয়ে শেষ দিকে কৃষকদের উদ্বেগের সীমা থাকে না। তাঁদের এই উদ্বেগের মধ্যে না রেখে কর্তৃপক্ষের উচিত যত দ্রুত সম্ভব বাঁধের কাজ শুরু করা।
গত বছর সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যায় ফসলহানি হয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে যখন খাদ্যের প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তখন যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ না করায় ফসলহানি হলে তার প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে পড়বে। এ প্রেক্ষাপটে গড়িমসি না করে জরুরি ভিত্তিতে পিআইসি গঠন করুন। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।