প্রশংসনীয় উদ্যোগটি আরও বিস্তৃত হোক

সম্পাদকীয়

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য সুপরিচিত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে গত কয়েক দশকে প্লাস্টিক বর্জ্যের আধিক্য আতঙ্ক–জাগানিয়া বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরিকল্পিত পর্যটন, স্থানীয় মানুষের অসচেতনতা এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে দ্বীপটি পরিবেশগত সংকটের মুখে আছে অনেক
দিন থেকেই।

এ অবস্থায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে সেন্ট মার্টিনকে প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ দ্বীপটির পরিবেশ পুনরুদ্ধারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের আওতায় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, তা রিসাইকেল এবং দ্বীপের বাস্তুসংস্থান রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বর্জ্যগুলো সমুদ্রপথে টেকনাফে নিয়ে যাওয়া এবং রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরির উদ্যোগ পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে। এর পাশাপাশি দ্বীপের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রকল্পটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এটি সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। প্লাস্টিকের কারণে প্রবাল প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি জলজ প্রাণীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

সেন্ট মার্টিনে জমে থাকা প্লাস্টিক কেবল পরিবেশ দূষণই করেনি, বরং দ্বীপের বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। তাই এই বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমন উদ্যোগ দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকায়ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও সুন্দরবন এলাকাগুলোও প্লাস্টিক–দূষণের শিকার। পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই এলাকাগুলোর পরিবেশগত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সেন্ট মার্টিনের প্রকল্পটি এ ক্ষেত্রে একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

সরকার ইতিমধ্যেই সেন্ট মার্টিনকে রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। দ্বীপে পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং রাত যাপনের অনুমতি সীমিত করার পদক্ষেপগুলো পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে আরও কার্যকর এবং সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; পর্যটকদের সংখ্যা যৌক্তিক মাত্রায় রাখা, দ্বীপে মাছ ও শুঁটকি পরিবেশবান্ধব উপায়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা ইত্যাদি দিকেও নজর দিতে হবে।

এই পদক্ষেপগুলো যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রকৃতি এবং বাস্তুসংস্থান রক্ষা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

প্রশ্ন যেখানে জনস্বাস্থ্য এবং দূষণ, সেখানে দায়িত্ব কারও একার হতে পারে না। পারস্পরিক দোষারোপ ভুলে এই কথা সবাইকে আত্মস্থ করতে হবে। বিষয়টিকে সামনে রেখে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আরও বড় ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার জরুরি।