ছাত্রলীগের এই ঔদ্ধত্যের শেষ কোথায়

সম্পাদকীয়

যেখানে কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ ভিত্তিহীন অভিযোগে আবাসিক শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন, সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এ জন্য তাঁরা ধন্যবাদ ও প্রশংসা পেতে পারেন।

এর আগেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার প্রতিবাদেও তাঁরা মাঠে নেমেছিলেন। যেটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তেমন একটা দেখা যায় না।

অনেক দিন ধরেই আমরা লক্ষ করছি, সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের একশ্রেণির নেতা-কর্মী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নানা রকম অপরাধমূলক কাজ করছেন। প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন ও চাঁদাবাজি যেন তাঁদের ‘রুটিন কাজ’ হয়ে পড়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের একটি কক্ষে তিন ঘণ্টা ধরে আটকে রেখে মারধর করা হয় অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সামছুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে। মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে ওই রাতেই ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ দেন সামছুল। এরপর রাতেই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগের একটি অংশে সামছুল বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা তাঁকে এ বলে হুমকি দেন—এ ঘটনা কাউকে বললে আবরারের যে অবস্থা হয়েছে, তাঁরও সেই অবস্থা হবে। ওই ছাত্রলীগ নেতা উল্লিখিত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা তো নিয়েছেনই, দুই অনুসারীকে নিয়ে তাঁকে রড ও স্টাম্প দিয়ে মারধরও করেছেন। আর এসব প্রশাসনকে জানালে আবরারের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছিলেন সেখানকার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

সেই ঘটনায় অপরাধীরা শাস্তি পেয়েছেন। এরপরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা এ ধরনের ঔদ্ধত্য কীভাবে দেখান? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছেন। কিন্তু এ ধরনের ঘটনার তদন্ত করতে কত দিন সময় লাগে? ছাত্রলীগের নেতা যখন প্রকাশ্যে আববারের মতো অবস্থা হবে বলে হুমকি দেন, তখন সেখানকার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হতে হয় বৈকি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

কয়েক মাস আগেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাঁরা হলে উঠতে পারলেও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছেন।

কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরা। সম্প্রতি ইডেন কলেজের এক ছাত্রলীগ নেত্রী সেখানকার আবাসিক হলের এক ছাত্রীকে এই বলে হুমকি দিয়েছেন, ‘আমি সিট না দিলে তোর কোন বাপ দেবে?’ ইডেনের ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর এই আস্ফালনের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা নেই।

এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। তাঁরা শিক্ষাঙ্গনে নানা রকম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছেন। অথচ ইডেন কলেজের মতো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষাঙ্গনে ন্যূনতম শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করি।