সিভাসু কর্তৃপক্ষের এই অবহেলার অর্থ কী

সম্পাদকীয়

গবেষণার জন্য সুনাম আছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু)। তবে দেশের অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখানেও আছে নানা অবহেলা।

বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জীবাণুর পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচনের জন্য ২০২২ সালে সেখানে একটি দামি যন্ত্র বসানো হয়েছিল। কিন্তু এখনো চালু না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সেখানকার গবেষক–শিক্ষকেরা। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়ছেন তাঁরা। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত উচ্চশিক্ষার বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠান দেশের একমাত্র ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়। সিভাসুর গবেষণাকে আরও বেগবান করতে ২০২২ সালে সেখানে বসানো হয় সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি দামের একটি যন্ত্র। এটির কাজ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জীবাণুর পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন। কিন্তু শিক্ষকদের কোনো কাজেই আসছে না এ যন্ত্র।

এক বছর ধরে অনেকটা অব্যবহৃত পড়ে আছে সেটি। অন্যদিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য বাইরের দেশের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। এতে একেকজনের খরচ হচ্ছে ২ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। গবেষণার নমুনা দেশের বাইরে পাঠানোর কারণে গবেষকদের সময়ও নষ্ট হচ্ছে। তাহলে নিজের প্রতিষ্ঠানেই এত দামি যন্ত্র বসিয়ে কী লাভ হলো?

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এ যন্ত্র বসানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ১৫ দিন পর পরীক্ষামূলকভাবে সেটি দিয়ে জীবনরহস্য উদ্‌ঘাটনের কাজ শুরু করা হবে। এর জন্য পরীক্ষাগারে কর্মরত ব্যক্তিদের তিন দফায় প্রশিক্ষণও অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই ১৫ দিন এখনো শেষ হয়নি। যন্ত্রটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা গেলে লাভবান হবে সিভাসু নিজেই। কিন্তু সেই লাভের মুখ কেন দেখতে চায় না কর্তৃপক্ষ, সেটিই প্রশ্ন। অথচ সিভাসুর নিজস্ব অর্থায়নেই যন্ত্রটি কেনা ও বসানো হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা বলছেন, সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ শেষ করে যন্ত্রটি ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব, কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না। গবেষণাগারের পরিচালকের বক্তব্য, চলতি জানুয়ারিতে সর্বশেষ আরেকটি প্রশিক্ষণ শেষে যন্ত্রটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তাঁর দাবি, নির্বাচনের কারণে প্রশিক্ষণ শেষ করা যায়নি।

এক বছরেও প্রশিক্ষণ শেষ করতে না পারা আর এর জন্য নির্বাচনের অজুহাত দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে সিভাসুর উপাচার্য এ এস এম লুৎফুল আহসানের বক্তব্য, যন্ত্রের সহায়ক কিছু সরঞ্জাম কেনা বাকি আছে। যন্ত্রটি বসানোর সময় সেসব কেনা হয়নি। এ অর্থবছরে সে সরঞ্জামগুলো কিনে দ্রুত যন্ত্রটি চালু করা হবে।

তার মানে প্রশিক্ষণ যদি শেষ করাও হয়, শিগগিরই এ যন্ত্র চালু হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ খরচ করে কেনা এই যন্ত্র নিয়ে এমন অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সেটি চালু করা হোক।