গোটা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে গেড়ে বসা দুর্বৃত্তায়নের কয়েকটি নমুনা প্রতিনিয়তই প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন আর মাছের ঘের তৈরি।
ক্ষমতাসীন রাজনীতি ও স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি সেখানে বিরাজ করায় সাধারণ মানুষ রীতিমতো অসহায় পড়ছে। আমরা বারবার সম্পাদকীয় লিখলেও এসব দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ সামান্যই।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভুক্তভোগী মানুষ যাদের কাছে গেলে সমাধান পাবে, তারা নিজেরাই এসব দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে।
যার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি খুলনার প্রত্যন্ত উপজেলায় বেড়িবাঁধ কেটে নদীর নোনা পানি ঢুকিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েক হাজার চিংড়িঘের। বছরের পর বছর এমন কর্মকাণ্ড চললেও কোনোভাবেই তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এমন নয় যে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের অজানা। সবাই সবকিছুই জানে। কিন্তু কেউ কিছু করছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হয়ে পড়েছে কয়রা। গোটা এলাকা লবণাক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে জীবন-জীবিকা হারিয়ে দিন দিন মানুষ ওই এলাকা ছাড়ছে। সেখানকার বেড়িবাঁধের ভেতরে হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি। চিংড়িঘেরের জন্য প্রবেশ করানো নোনা পানির কারণে সেসব জমিতে ধান চাষ করা যাচ্ছে না।
জমি থাকতেও জীবিকার সংস্থান করতে পারছেন না সেখানকার কৃষকেরা। আর কোনো ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় বাঁধের জন্য কয়রার মানুষের আহাজারি আমাদের কাছে পরিচিত দৃশ্য। সেই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে এই চিংড়িঘের ব্যবসায়ীরা কম দায়ী নয়। শুধু জনজীবন নয়, হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার জীববৈচিত্র্যও।
এই চিংড়িঘের গড়ে তুলেছেন জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও এ কর্মকাণ্ডে অপূর্ব সমঝোতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। গত বছর স্থানীয় মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে লবণপানির চিংড়িঘেরের বিরুদ্ধে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
জনসাধারণের দাবির মুখে সে সময় উপজেলা পরিষদের সভায় লবণপানির ঘের বন্ধ করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একমত হন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২০২৩ সাল থেকে উপজেলার কোথাও নদী থেকে লবণপানি লোকালয়ে প্রবেশ করিয়ে ঘের করা যাবে না এবং অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু দিন শেষে ‘যে লাউ সেই কদু’র মতো ঘটল ব্যাপারটি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বক্তব্য, বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত করে যাঁরা নোনাপানির চিংড়ি চাষ করছেন, তাঁদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাপ্তরিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এখন দেখার অপেক্ষা তাঁরা কী ব্যবস্থা নেন।