দুর্নীতি মামলার বিচার কেন থেমে থাকবে

সমাজ ও রাষ্ট্রে অপরাধকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা বিচারের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। বিচারপ্রক্রিয়া চলমান থাকলে অপরাধীরা কিছুটা হলেও আইনের আওতায় থাকে। অন্যদিকে বিচার ব্যাহত হলে বা বিচারে বিলম্ব হলে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। আমাদের দেশে বিচার বিলম্ব হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো বিচারকস্বল্পতা।

প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস ধরে বিচারকশূন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। এ কারণে দুর্নীতির মামলাগুলোর বিচার থেমে আছে। সরকারি কৌঁসুলিরা বলেছেন, এর ফলে শাস্তির আওতায় না আসায় দুর্নীতিবাজেরা উৎসাহিত হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার দুর্নীতির মামলার বিচারের জন্য একমাত্র আদালত চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। এই আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬০৪। গত ২১ মার্চ এই আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদ কক্সবাজারে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি হন। এর পর থেকে বিচারকশূন্য আদালতটি।

এই আদালতে বেশ কিছু প্রভাবশালী এবং আলোচিত ব্যক্তির দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা, কক্সবাজারের উখিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, কক্সবাজারের আনিসুর রহমান ইয়াহিয়া, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবু আহমেদসহ বন্দর, কাস্টমস, ভূমি অফিসসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা।

স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে বিলম্বিত বিচারের কারণে দুর্নীতিবাজেরা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে না। এ কারণে এ ধরনের বিচারকশূন্যতার বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। বিচারক বদলি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিচারকের যোগদান নিশ্চিত করতে পারলে বিচারপ্রক্রিয়ায় এ ধরনের বিলম্ব কিছুটা সহনীয় মাত্রায় আসবে।

বিচারকের স্বল্পতা এবং বিলম্বে বিচারের একটি অবধারিত ফল হলো মামলাজট। এ বছরের শুরুতে আইন কমিশনের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত সব পর্যায়ের আদালতেই বিচারকের স্বল্পতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে বিচারকের অনুপাত বিদ্যমান মামলার তুলনায় খুবই স্বল্প। বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরে। বিপুলসংখ্যক মামলার বিচারের জন্য বিচারকের সংখ্যা অতি নগণ্য। মামলাজট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে পাঁচ হাজার বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

মামলাজট কমিয়ে দ্রুত বিচার করতে হলে বিচারকস্বল্পতা দূর করার কোনো বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দুর্নীতির মামলাগুলোর বিচার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।