কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রাম শহরে নির্বিচার পাহাড় কাটা হলেও এর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। পাহাড়খেকোরা এতই ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী যে উচ্চ আদালতের আদেশও তাঁরা মানতে চাইছেন না। প্রভাবশালীদের পাশাপাশি সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধেও পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, শহরের আকবর শাহ এলাকার উত্তর পাহাড়তলীয় মৌজায় অবস্থিত তিনটি পাহাড়ের আয়তন ছিল ৮ দশমিক ৬০ একর। কিন্তু বর্তমানে অবশিষ্ট আছে মাত্র ২০ শতাংশ। বাকি পাহাড় দখল করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাও। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী মো. শফিকুল ইসলাম খান গত ২৮ ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগে বলেন, কাউন্সিলর জহুরুল আলম ২০১৪ সাল থেকে পাহাড় কেটে আসছেন। তাঁর সহযোগীরাও এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন।

কাউন্সিলর নিজে কেবল পাহাড় দখল করেননি, পাহাড় কেটে প্লট করে বিক্রিও করেছেন। পার্শ্ববর্তী বেলতলীঘোনা এলাকায় তিন একরের পাহাড়ের ৫০ শতাংশ কেটে জহুরুল আলম তাঁর বাবার নামে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। যদিও আধা কিলোমিটারের মধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই কাউন্সিলর আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন না। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাউন্সিলর ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি।

 এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের দাবি, সিডিএ ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পাহাড় দখল করে রাখেন, সেই করপোরেশন দিয়ে কমিটি করে কোনো ফল পাওয়া যাবে না।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় কাটার কাজ দেখতে গেলে কাউন্সিলরের লোকজন বাধা দেন এবং তাঁর গাড়িতে ঢিল ছুড়ে মারেন। উল্লেখ্য, লেকসিটি এলাকায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে উচ্চ আদালতে রিট করে বেলা। এতে পাহাড়তলীয় এলাকার ১০ একর পাহাড় কাটার অভিযোগ আনা হয়। ২০২০ সালে আদালত ওই এলাকার পাহাড় রক্ষার বিষয়ে রুল জারি করার পরও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি।

চট্টগ্রামে কেবল আকবর শাহ এলাকায় নয়, অনেক এলাকার পাহাড় ধ্বংস করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৩৫টি।

পাহাড় কাটার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রায় ৬০টি। কিন্তু চার্জশিট এবং সাক্ষ্য–প্রমাণের অভাবে বেশির ভাগ মামলা ঝুলে আছে। বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় হারিয়ে গেছে এবং ৯৫টি পাহাড় আংশিকভাবে কাটা হয়েছে।

কাউন্সিলর একজন জনপ্রতিনিধি। তাঁর দায়িত্ব ছিল অন্য কেউ পাহাড় কাটলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তিনি সেটি না করে নিজেই ভক্ষকের ভূমিকায় নেমেছেন। এ রকম জনপ্রতিনিধি যেখানে থাকবে, সেখানে পাহাড় তথা প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা আশা করা যায় না। অবিলম্বে এই পাহাড়খেকো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।