তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দায় কার

সম্পাদকীয়

গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থীদের আনন্দযাত্রা যে শোকে পরিণত হলো, এর দায় কার? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বাসচালক ও বিদ্যুৎ বিভাগ কি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছে? করলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ২৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে আটটায় শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে পৌঁছানো মাত্র সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টেজের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয় একটি বাস (নং ঢাকা মেট্রো ব-১৫৭০৩৮)। এ সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়। আহত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন অংশ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কারও হাত, কারও পা, কারও মুখ ঝলসে যায়। পরে আরও একজন মারা যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার আইইউটির তৃতীয় বর্ষের ৪৬০ জন শিক্ষার্থী ওই এলাকার ‘মাটির মায়া’ রিসোর্টে ছয়টি বিআরটিসি দোতলা বাস এবং তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে পিকনিকে আসেন। পাঁচটি বাস রিসোর্টে চলে যায়। সবার শেষের বাসটি সড়কের পাশের ১১ হাজার ভোল্টেজের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় বাস থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকলে ছাত্ররা চিৎকার শুরু করেন। পরে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎলাইনের সংযোগ বন্ধ করতে বললে তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খন্দকার মাহমুদুল হাসান জানান, সড়কের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন ক্রস করা অবস্থায় রয়েছে। একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে দোতলা বাসটি একটু হেলে পড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এখানে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে, তা হলো প্রথমত সড়কের ওপর দিয়ে আড়াআড়ি থাকা বিদ্যুৎলাইনটি কতটা ঝুঁকিমুক্ত ছিল? দ্বিতীয়ত, অপর একটি বাসকে জায়গা করে দিতে গিয়ে দোতলা বাসটির চালক কেন নিজের বাসকে ঝুঁকিতে ফেললেন? বিদ্যুৎ খাতে মহা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা শুনেছি বিগত সরকারের আমলে। সেই উন্নয়ন পরিকল্পনার নমুনা কি এই ঝুঁকিপূর্ণ লাইন? এ ক্ষেত্রে বাসচালকও দায় এড়াতে পারেন না।

এই যে তিন শিক্ষার্থী পিকনিকে যাওয়ার পথে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার শিকার হলেন, এর জবাব কী? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদাধিকারী বলেছেন, বিপদ বলে-কয়ে আসে না। এর মাধ্যমে তিনি কেবল দুর্ঘটনাকে লঘু করে দেখলেন না, দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদেরও রক্ষার চেষ্টা করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই কর্মকর্তা কিংবা প্রশাসন কি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আগাম ব্যবস্থা নিয়েছিল?

বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা শুধু পরিবার নয়;  রাষ্ট্র ও সমাজের জন্যও অপূরণীয় ক্ষতি। দুর্ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কখনো বেপরোয়া যান চলাচল, কখনো ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে। কিন্তু আইইউটির তিন শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হলো বিদ্যুতায়িত হয়ে; একে মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা বললেও অত্যুক্তি হবে না। 

কেবল সড়কে নয়, দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিরাপদ করা সময়ের দাবি। দুর্ঘটনা এড়াতে উন্নত দেশগুলোতে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎলাইন স্থাপন করা হয়। আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগ কেন মাটির ওপর দিয়ে লাইন স্থাপন করে মানুষকে এভাবে ঝুঁকিতে ফেলছে? বিলম্বে হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ুক।