জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের পানির কষ্ট নতুন কিছু নয়। পানির প্রধানতম উৎস ঝিরি-ঝরনা শুকিয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে ছয় মাস পানির কষ্ট লেগেই থাকে। সেই সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানিদূষণও। সম্প্রতি ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেলে সেখানকার উৎসের পানিদূষণের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে এক সমীক্ষায়। এ নিয়ে গত মে মাসে আমরা একটি সম্পাদকীয়ও লিখি। পানিদূষণের কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার-ওষুধ মিশছে ঝিরি-ঝরনায়। তবে মাছ শিকারের জন্য ঝিরিতে কীটনাশক ছিটিয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর ঘটনাও আছে। যেমনটি আমরা দেখতে পেলাম বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েনপাড়ায়। দুর্গম এলাকার পাড়াটিতে ম্রো জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। ঝিরি দূষিত হওয়ায় তাঁরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত মঙ্গলবার পাড়াটির পানির প্রধান উৎস কালাইয়া ঝিরিতে মাছ ধরতে কীটনাশক ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এতে চিংড়িসহ নানা ধরনের মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী পচে দুর্গন্ধ তৈরি হয় ঝিরির পানিতে। এমন পরিস্থিতিতে ম্রো সম্প্রদায়ের ১৫টি পরিবার পানিসংকটে পড়ে যায়। পাড়াপ্রধানের অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী রবারবাগানের শ্রমিকেরা এ কাজ করেছেন। ১৪ থেকে ১৫ জন শ্রমিক দুই দলে ভাগ হয়ে ঝিরিতে কীটনাশক ছিটিয়ে দেন। এরপর মরে ভেসে ওঠা মাছ, চিংড়ি ও কাঁকড়া ধরতেও দেখা গেছে তাঁদের। পাড়াবাসী প্রতিবাদ জানালে শ্রমিকেরা পালিয়ে যান। কীটনাশক ছিটিয়ে দেওয়ায় বিষের প্রভাবের কারণে গত মঙ্গলবার থেকে ঝিরির পানি ব্যবহার বন্ধ করে দেন পাড়াবাসী। পানির অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েন তঁারা। তবে দু-এক দিন বৃষ্টি হওয়ায় তাঁদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।

এ ঘটনায় স্পষ্টভাবে আঙুল উঠেছে লামা রবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। তবে প্রতিষ্ঠানটি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বান্দরবানের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অভিজিৎ শীল বলেন, পানিতে কীটনাশক বা বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা মারাত্মক অপরাধ। প্রবহমান পানির উৎস হলে চার-পাঁচ দিন বিষের প্রভাব থাকতে পারে। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর এমন বক্তব্যে আমরা অবাক হই। অভিযোগ না পেলে কি তাঁর কিছু করার নেই, এ কেমন দায়িত্বহীনতা! এমনকি উপজেলা প্রশাসনের কোনো তৎপরতাও দেখা যায়নি।

গত এপ্রিলে সেখানকার তিনটি ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়ার ৩৫০ একর জুমের জমি কেটে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে রেংয়েনপাড়াও ছিল। পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীকে ভূমিহীন করার নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল। ঝিরিতে কীটনাশক ছিটানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। সেখানে কারও ইন্ধন ছিল কি না, সেটিও তদন্ত করা হোক।