বনায়নের অর্থ কোথায়, কীভাবে ব্যয় হলো

সম্পাদকীয়

ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জানমাল রক্ষায় বন যে কতটা অভেদ্য দুর্গের মতো কাজ করে, তার সাম্প্রতিক নজির আমরা দেখেছি ঘূর্ণিঝড় রিমালে। আবার তাপপ্রবাহ, খরা, অনাবৃষ্টির মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় বনায়নের বিকল্প নেই। কিন্তু বন বিভাগ বনায়নের একটি প্রকল্প যেভাবে বাস্তবায়ন করছে, তাতে কোনোভাবেই বলা যায় না তারা এ ব্যাপারে আন্তরিক। বরং তারা সরকারি প্রকল্পের টাকা ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’র মতো ব্যয় করেছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কক্সবাজার জেলায় সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প নেয় বন বিভাগ। প্রকল্পটি আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা। উপকূল রক্ষার জন্য নেওয়া এ প্রকল্পে ইতিমধ্যে ২১ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু বনায়ন কোথায়, কীভাবে হয়েছে, সেটা দৃশ্যমান নয়।

সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমইডি) বিভাগের প্রতিবেদনে এই প্রকল্পে বনায়নের যে চিত্র পাওয়া গেছে, সেটা অত্যন্ত হতাশাজনক। আইএমইডি বলছে, এ প্রকল্পের ৪০ শতাংশের বেশি চারা নষ্ট হয়ে গেছে। পরিচর্যার অভাবে গাছের চারা মরে গেছে, অনেক চারা গরু-ছাগলে খেয়ে ফেলেছে, আবার অনেক জায়গায় চারার অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদক কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে গিয়ে যে চিত্র দেখতে পেয়েছেন, সেটা আরও ভয়াবহ। সেখানে কয়েক হাজার তালগাছ রোপণের কথা থাকলেও বাস্তবে বেশির ভাগ জায়গায় চারার অস্তিত্বই দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট যাঁদের এসব চারা রোপণ করার কথা, তাঁরাও বলতে পারেননি সেগুলোর ভাগ্যে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে।

কক্সবাজারের এই সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প তৃতীয় একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে মূল্যায়ন করেছে আইএমইডি। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বেশ কিছু অনিয়ম ও অসংগতি উঠে এসেছে। এ প্রকল্পে সব বিষয়ে ক্রয় পরিকল্পনা থাকলেও বনায়নের ক্রয় পরিকল্পনা নেই। অথচ উন্নয়ন বাজেট থেকে সরকারের যে বিভাগই অর্থ নিক, তাতে ক্রয় পরিকল্পনা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ‘বন বিভাগের কোনো প্রকল্প প্রস্তাবে ক্রয় পরিকল্পনা দেওয়া থাকে না’ বলে যে ভাষ্য দিয়েছেন, সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য?

উপকূল রক্ষার নামে বনায়ন প্রকল্প নেওয়া হলো, তাতে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ও হলো, কিন্তু বাস্তবে বনায়নের কিছুই হলো না। এভাবে জনগণের করের অর্থ পানিতে ফেলার মানে কী? প্রকল্পটি যেভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটাকে মোটেই স্বচ্ছ বলা যাবে না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে, বনায়নের এতগুলো অর্থ কোথায়, কীভাবে ব্যয় হয়েছে।