গত বছর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, এখন থেকে বিদ্যুতে আর ভর্তুকি দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও বাড়ানো হবে। সরকার যদি এটাই নীতি হিসেবে নিয়ে থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম কম ছিল, তখন কেন দেশের বাজারে ইচ্ছেমতো বাড়ানো হলো?
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দেড় বছর আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সময় বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও কমবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া বাড়তি অর্থ নিয়ে দেড় বছর ধরে মুনাফা করছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের শুল্ক-কর থেকে বিপুল রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি লভ্যাংশও নিয়েছে সরকার।
২০২২ সালের আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়। পরে প্রতি লিটারে ৫ টাকা কমানো হয়। এর পর থেকে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, পেট্রল ১২৫ টাকা ও অকটেন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। বিপিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিপিসি মুনাফা করেছে ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। সরকারকে লভ্যাংশ দিয়েছে ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে বিপিসি।
জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, লম্বা সময় ধরে মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। অথচ গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মুনাফা করছে। জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুযোগ ছিল। এটি কমালে বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম, বিশেষ করে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমত। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। কয়েক মাস ধরে ডিজেল বিক্রি করেও মুনাফা করছে বিপিসি।
এর আগে টানা সাত বছর মুনাফা করে সংস্থাটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা লোকসান দেওয়ার পর জ্বালানির দাম আবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০২২ সালের মার্চে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল (১৫৮ দশমিক ৯৯ লিটার) ১৪০ ডলারে পৌঁছায়। একই সময়ে ডিজেলের দাম ১৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ধাপে ধাপে দাম কমতে থাকে।
বিশ্ববাজারে ডিজেলের গড় দাম ১৩৯ ডলার ধরে দেশে নতুন দাম নির্ধারণ করে সরকার। গত বছর জ্বালানি তেলের দাম কমে ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে বিশ্ববাজারে। তবে বর্তমানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮০ ডলার। আর ডিজেলের দাম ৯৮ ডলার। সে ক্ষেত্রে দেশি বাজারে জ্বালানির দাম আগের অবস্থানে রাখার যুক্তি নেই।
আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যদি দেশি বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশি বাজারে কমানো হবে না কেন? ডলার–সংকটের কারণে বড় ধরনের ধাক্কা পড়েছে দেশের জ্বালানির বাজারেও। এটা সামাল দেওয়ার নাম করে সরকার ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে না। কেননা জ্বালানির দাম বাড়লে জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়।
একটি সংস্থার লাভের জন্য দেশের কোটি কোটি গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন না। অতএব এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এখনই তেলের দাম সমন্বয় করা হোক।