দ্রুত আমদানি নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

চালের দাম যে বাড়ছে, সেটা জানতে পরিসংখ্যানের প্রয়োজন হয় না। রাস্তার মোড়ে টিসিবির ট্রাকের সামনের দীর্ঘ লাইন দেখলেই সেটা স্পষ্ট। আগে গরিব মানুষেরাই লাইনে দাঁড়াতেন। এখন নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক নারী–পুরুষকেও লাইনে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।

কয়েক মাস থেকেই অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে চালের দামও বাড়ছে। গত বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়, যাতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় গত বছর চাল আমদানির পরিমাণ অনেক কম ছিল। কিন্তু এবার আমদানি বাড়বে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও উজানের দেশগুলো থেকে আসা ঢলে আমনের উৎপাদন প্রায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টিসিবি বলছে, গত ৮ আগস্ট নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম কেজিতে ২ টাকা, মাঝারি চাল ৪ টাকা এবং সরু চালের দাম ১২ টাকা বেড়েছে।

এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাশ্রয়ী দামে চাল, আটা, চিনি ও ভোজ্যতেলের বিক্রি বাড়ানো, যাতে করে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। সংশ্লিষ্টদের নিশ্চয়ই এটা অজানা নয় যে দেশে কোনো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হলে চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালে হাওরে আগাম বন্যায় বোরো মৌসুমের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন এক সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৭ থেকে ৯ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। বিদেশ থেকে চাল আমদানির জন্য তৎকালীন সরকারকে বেশ দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছিল। এবার যাতে সেই পরিস্থিতি না হয়, সে জন্য সরকারকে আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গরিব মানুষের খাদ্যব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় চালের পেছনে। চালের দাম এমন সময়ে বাড়ছে, যখন ভোজ্যতেল, চিনি, সবজি, ডিম, মুরগির মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম চড়া। খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, তাদের গুদামে এখন চালের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমেছে, যা গত ১৫ আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুত কমছে। এ অবস্থায় চালের মজুত ও খোলাবাজারে বিক্রি দুটোই বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তা মজুত ও সম্ভাব্য ঘাটতি বিবেচনায় ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও কারসাজি ঠেকাতে সরবরাহ বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ী ও চালকলমালিকদের কারসাজি নিয়ে মাঝেমধ্যেই কথা হয়। কিন্তু কথা হলো বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? সব সময়ই কারসাজির বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। এবার সরকার এই করসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে দেওয়া একটি প্রতিবেদনে বলেছে, চাল আমদানি বাড়াতে শুল্ক-কর পুরোপুরি তুলে নেওয়া দরকার। সরকার ২০ অক্টোবর এক দফায় চালের শুল্ক-কর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়েছে।

এদিকে গতকাল রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তে আমদানি বাড়বে বলে আশা করা যায়। তাতে বাজারেও চালের দামের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণে চাল আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজারেও সরকারের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, যাতে শুল্ক তুলে নেওয়ার সুবিধা ভোক্তারা পান।