গত শনিবার দেশের বেশির ভাগ স্থানে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত অবস্থান কর্মসূচি নির্বিঘ্নে পালিত হলেও কয়েকটি স্থানে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বাড়াবাড়ি না করলে এবং কয়েকটি স্থানে পুলিশ বাধা না দিলে সারা দেশেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হতো।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, শনিবার বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১২ জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শতাধিক ব্যক্তি আহত ও ৫৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার সিলেটে বিএনপির এক নেতাকে আটক করার কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত, সেখানে এক দলের কর্মসূচিতে অন্য দল বাধা দেবে কেন?
শনিবার সব মহানগরের থানা-উপজেলায় দুই ঘণ্টার (বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত) ‘অবস্থান কর্মসূচি’ দেয় বিএনপি। এদিন কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি ছিল না; তারপরও কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ‘শান্তি কর্মসূচি’ পালন করেন; যা অশান্তি ডেকে এনেছে। বিএনপির দাবি, ক্ষমতাসীনদের হামলা ও পুলিশের বাধায় রাজধানীর সাতটি থানায় অবস্থান কর্মসূচি হতে পারেনি। ঢাকার বাইরে যশোরের শার্শা, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, মাদারীপুরের ডাসার, ফেনীর দাগনভূঞা, ভোলার মনপুরা, নাটোর, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ ও বগুড়ার শেরপুরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে পুলিশি বাধার কারণে বিএনপির কর্মসূচি পালিত হতে পারেনি।
বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ‘নাশকতার’ আশঙ্কার কথা বলেছেন। নাটোরে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, এর আগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগের এক নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তঁারা বিএনপিকে মাঠে নামতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সিদ্ধান্ত বিএনপি নিলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে? কোথাও নাশকতার ঘটনা ঘটলে তা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এ অজুহাত দেখিয়ে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না।
রোজার দিনে সবার কাছে সংযম প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সেই সংযম দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও নিরপেক্ষভাবে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেননি। অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় পুলিশ যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী। সংঘর্ষ হলো দুই পক্ষের মধ্যে, কিন্তু তারা গ্রেপ্তার করল এক পক্ষের নেতা-কর্মীকে!
এর আগেও আমরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নেওয়ার বিরোধিতা করেছি, এখনো করছি। শনিবার কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো পাল্টা কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। তারপরও কোথাও কোথাও দলের একশ্রেণির নেতা-কর্মী অতি উৎসাহী হয়ে পাল্টা কর্মসূচি পালনের নামে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছেন। এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ও উদ্বেগজনক।
নির্বাচন নিয়ে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সেটাই সব দেশে হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আলোচনার চেয়ে রাজপথে কিংবা গায়ের জোরে সমাধান চাপিয়ে দিতে চাইছে। চলমান বৈশ্বিক সংকট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। এরপরও যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!