ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয় দিন পরপরই ‘বহিরাগতদের’ প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্যাম্পাস এলাকায় বাইরের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও তা কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত, দোয়েল চত্বরসহ ক্যাম্পাসের সাতটি প্রবেশপথে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে এসব এলাকা ঘিরে অনেকগুলো সড়কে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়। ছুটির দিনে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত নানা প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি ও নানা কাজে ওই এলাকা অতিক্রম করতে গিয়ে সেই যানজটে আটকা পড়ে। যথাযথভাবে প্রচার না করে হঠাৎ এমন একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করায় জনগণকে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হয়।
ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষার্থে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বাইরের যানবাহন চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তবে জরুরি পরিবহন, রোগী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অতিথির গাড়ি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দাপ্তরিক কাজে এলে ক্যাম্পাসে ঢোকা যাবে এবং হেঁটে ক্যাম্পাসে ঢুকতে কোনো বাধা নেই। প্রক্টর আরও জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের এই সিদ্ধান্তের কথা বলেছিলেন। যদিও বিষয়টি সেভাবে প্রচার হয়নি। এ নিয়ে সমালোচনা উঠলে শনিবার জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়টি জরুরি অবশ্যই। কিন্তু সেটি কতটা বাস্তবসম্মত উপায়ে করতে হবে, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের ভেতরে অনেকগুলো মিলনায়তনে নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, যেগুলোর আয়োজক থাকে ক্যাম্পাসের ভেতর-বাইরের বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। ক্যাম্পাস এলাকার ভেতরেই আছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমি, ব্রিটিশ কাউন্সিলের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি না হয়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা নানা প্রয়োজনে অনেক মানুষ ও বিশিষ্ট ব্যক্তি যানবাহন নিয়ে ওই এলাকায় যান। এসব যানবাহন যদি প্রবেশ করতে দেওয়া না হয়, তবে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়বেন।
বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কয়েকজনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে তাঁরা জানান, ক্যাম্পাসের ভেতরে অবশ্যই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আবার তাঁরা এ–ও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও চারপাশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কারণে ক্যাম্পাসের ভেতরের রাস্তাগুলোতে বাইরের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তা ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ চলাকালে এ সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর করবে ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ?
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মনে করেন, শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ যেমন রক্ষা করতে হবে, আবার জনদুর্ভোগও তৈরি করা যাবে না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহরের এমন একটি জায়গায় অবস্থিত এবং তার ভেতরে ও চারপাশে এত জরুরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া বাস্তবসম্মত হিসেবে বিবেচিত না–ও হতে পারে। গাড়ির হর্ন নিষিদ্ধ করা, হকার ও ভ্রাম্যমাণ দোকান বা বারোয়ারি দোকানের আধিক্য কমানো, ক্যাম্পাসের ভেতরে নির্দিষ্ট সংখ্যক রেজিস্টার্ড রিকশা ব্যবস্থা চালু করা, কোনো গণপরিবহন বা বাস ঢুকতে না দেওয়া, নীলক্ষেত গেটে বিপরীতমুখী যান চলাচল বন্ধ করা ইত্যাদি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক, এটিই কাম্য। তবে আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করবে।