২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শামসুজ্জামানের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করুন

সম্পাদকীয়

একটি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গভীর রাতে সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে আটক ও পরে সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে কায়দায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) মামলা করা হয়েছে, তা দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতি সরকারের বৈরী আচরণের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

গভীর রাতে সাভার থেকে শামসুজ্জামানকে সিআইডি পুলিশ পরিচয়ে আটক করার পর দিনভর নানা লুকোচুরি চলে এবং আটকের ৩৫ ঘণ্টা পর তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। রমনা থানায় করা মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের জন্য একটি কার্ড তৈরি করা হয়। সেখানে দিনমজুর জাকির হোসেনের একটি উদ্ধৃতি ছিল।

কার্ডে ছবি হিসেবে সাভার স্মৃতিসৌধের বন্ধ গেটের সামনে দাঁড়ানো শিশু সবুজের ছবি ব্যবহার করা হয়। মূল প্রতিবেদনে ওই শিশুর বক্তব্যও ছিল এবং সেখানে শিশুর ও দিনমজুরের কথা আলাদাভাবেই উদ্ধৃত করা হয়। কিন্তু কার্ডে ছবিটি শিশুর এবং উদ্ধৃতিটি দিনমজুরের হওয়ায় বিভ্রান্তির আশঙ্কায় তা ফেসবুক থেকে দ্রুত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অনলাইন খবরের নিচে তার একটি সংশোধনীও প্রকাশিত হয়। এর সূত্র ধরে সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামে যুবলীগের এক কর্মী মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটায় তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই তাঁকে ধরতে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায় তাঁর বাসায় যায় সিআইডি পুলিশের তিনটি মাইক্রোবাস।

সিআইডি সদস্যরা সেখান থেকে তাঁকে আটক করার পাশাপাশি তাঁর ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যান। এরপর শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের ও তাঁর গ্রেপ্তার নিয়ে দিনভর লুকোচুরি খেলা চলে। বুধবার মধ্যরাতে রমনা থানায় দ্বিতীয় মামলাটিও দায়ের হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।

এই মামলার বাদী আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। প্রথম মামলায় আসামি হিসেবে শামসুজ্জামান ছাড়া আর কারও নাম না থাকলেও পরের মামলায় সম্পাদক মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়। আমরা মনে করি, প্রথম আলোর সাংবাদিকতার স্বাধীন অবস্থানকে সংকুচিত করতেই হয়রানিমূলকভাবে এর সম্পাদক ও প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে।

প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রতিবেদকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে মামলা দেওয়া হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের খবরকে উদ্ধৃত করে মামলায় বলা হয়েছে, প্রথম আলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত ও হেয়প্রতিপন্ন করেছে, যা পুরোপুরি অসত্য। প্রথম আলো শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট ছিল এবং এখনো আছে। বস্তুত এটিই প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতির মূল ভিত্তি। প্রকাশনার গত ২৪ বছরজুড়ে প্রথম আলো তার দায়িত্ব হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বহু গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্‌ঘাটন ও প্রকাশ করে এসেছে।

আমরা শুরু থেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করে আসছি। যে আইনের বেশ কিছু ধারার প্রয়োগই অপপ্রয়োগ, সে আইন জারি থাকলে কেবল গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, নাগরিকদের মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হবে।

আমরা অবিলম্বে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি এবং সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিল করা হোক। দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তি শামসুজ্জামানের মুক্তি ও সম্পাদক মতিউর রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন, বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন, তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।