চোর চক্র ধরতে কত দিন লেগে যাবে

সম্পাদকীয়

দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কত অভিনব কায়দায় তাঁদের পকেট থেকে অর্থ বের করে নেওয়া যায়, তার একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে রাজশাহীর বাগমারায় বিদ্যুতের মিটার চুরির ঘটনা। সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠীর অপরাধের কাছে মানুষের অসহায়ত্বের প্রতীকও এ ঘটনা।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, রাজশাহীর বাগমারায় রাতের অন্ধকারে গ্রাহকের বিদ্যুতের মিটার চুরি হয়ে যাচ্ছে। সকালে চুরি হয়ে যাওয়া মিটারের জায়গায় চিরকুট পাচ্ছেন গ্রাহক। সেই চিরকুটে লেখা থাকছে বিকাশ নম্বর ও টাকার পরিমাণ। সেই নম্বরে যোগাযোগ করে টাকা পাঠালেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে মিটার। গত দুই মাসে এ উপজেলায় অন্তত ২৫ গ্রাহকের মিটার চুরি হয়েছে। এভাবে একের পর এক মিটার চুরি হওয়ায় উদ্বিগ্ন গ্রাহক ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

আবাসিক, বাণিজ্যিক, সেচপাম্পের বৈদ্যুতিক মিটারসহ সব ধরনের গ্রাহকের মিটার চুরি করছে এ চক্র। মিটারভেদে চোরদের সঙ্গে দর–কষাকষি করে টাকা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় মিটার ফেরত দিচ্ছে তারা। একটা নতুন মিটারের দাম ২১ থেকে ২২ হাজার টাকা। চোর চক্র পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা নিয়ে মিটারগুলো ফেরত দেয়।

এটা সত্য যে ঝামেলা এড়াতে বেশির ভাগ গ্রাহকই চোরদের টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিচ্ছেন। তাঁদের এই ঝামেলার শঙ্কা তো অমূলক নয়। চুরি যাওয়া মিটারের জায়গায় নতুন মিটার কিনতে তাঁদের প্রায় চার গুণ অর্থ ব্যয় করতে হতো, যেটা তাঁদের জন্য অনেক বড় চাপ। তা ছাড়া সময়মতো বিদ্যুৎ–সংযোগ পাওয়া যাবে কি না, সে উদ্বেগও তাঁদের রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই আস্থাহীনতা তাঁদের মধ্যে কেন তৈরি হয়েছে? সরকারি সেবা কিংবা আইনি প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকেরা যে হয়রানির মুখে পড়েন, এই আস্থাহীনতা তারই প্রতিফলন নয় কি?

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর বাগমারা আঞ্চলিক দপ্তর গ্রাহকদের মিটার চুরির বিষয়টি গত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভায় উপস্থাপন করেছে। থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছে। বাগমারা থানার ওসি জানিয়েছেন যে চোরদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, টানা দুই মাস একটা চক্র কীভাবে এ ধরনের অপরাধ করে যেতে পারে? চোরেরা শুধু চুরিই করছে না, বিদ্যুতের মিটার জিম্মি করে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকাও আদায় করছে। তাদের শনাক্ত করতে না পারা, এখনো আইনের আওতায় না আনতে পারাটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শুধু ব্যর্থতার পরিচায়ক নয়, সাধারণ মানুষের সম্পদ রক্ষায় তারা যে উদাসীন, তারও দৃষ্টান্ত।

আমরা আশা করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রাহকের মিটার চুরির বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে নেবে এবং চোর চক্রকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনবে।