শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে

সম্পাদকীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনেকটা স্তিমিত ছিল দেশের শিক্ষা খাত। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। ফলে পুরোদমে পাঠদান শুরু হতে আরও দেরি হয়ে যায়। এর মধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি হলো। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে অনেক স্কুল ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ফলে সেসব এলাকায় নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ফেনীর সব কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, ৫৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪১টি কলেজ রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৮২ হাজার। এখনো অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় এখনো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জেলার প্রাথমিক কোনো বিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঠদান শুরু হয়নি। বন্যার পানি ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়েছে স্কুলের আসবাব, শিক্ষা উপকরণ, ভবন, সীমানাপ্রাচীর ও নলকূপ। এসব কারণে পাঠদান শুরু করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে পাঠদান শুরু হলেও উপস্থিতি কম। ঠিক কতটি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হয়েছে, তার হিসাব নেই সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে। তবে প্রাথমিকে পাঠদান নিয়ে গতকাল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা কর্মকর্তা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে যেসব বিদ্যালয় পরিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলোতে পাঠদান শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ১৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জমা দেওয়া হয়েছে। ৪১ কলেজের সব কটিতে পানি ঢুকেছে। এতে প্রাথমিকভাবে তিন কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মাহমুদা হক প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সে অর্থে চালু করা যায়নি। পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। যেগুলো পরিষ্কার হবে, সেগুলোতে পাঠদান করা হবে। কিন্তু বাচ্চাদের স্বাস্থ্যগত দিকটিও দেখতে হবে। কারণ, অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো দুর্গন্ধময় হয়ে রয়েছে। আর বইপত্রের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।

শুধু ফেনী নয়, বন্যাদুর্গত অন্য জেলাগুলোতেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। আমরা আশা করব, সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। বাজেট বরাদ্দ, বই ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সরবরাহসহ স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা–সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবে।