মানবসেবা পরম ধর্ম। পৃথিবীর সব ধর্ম ও আদর্শে মানুষের সেবা গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে সমাজে গড়ে ওঠে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ববোধ ও সম্প্রীতির পরিবেশ। অনেকে মানবসেবা করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে, অনেকে করেন পেশাগত জায়গা থেকে। ধাত্রী ও নার্সের পেশার মধ্য দিয়ে দেশের অনেক নারী সেবা করে যাচ্ছেন মানুষের। গতকাল নার্স দিবসে এ রকম কয়েকজন নারীকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। তাঁরা হলেন নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সুজিতা ঘাগ্রা, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার শামীমা রহমান এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কুলসুমা বিবি। তাঁরা সারা জীবন অসংখ্য মানুষকে সেবা দিয়েছেন, এমনকি অবসর গ্রহণের পরও থেমে নেই তঁাদের সেবা।
সুজিতা ঘাগ্রা (৫৫) নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা চিকিৎসক—সবার কাছেই তিনি ‘দিদি’ নামে পরিচিত। টানা ২৫ বছর ধরে রোগীদের সেবা দিয়ে যাওয়া এই নারী বর্তমানে অবসরে আছেন। একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে রোগীদের ভরসাস্থল সুজিতা। তিনি শুধু রোগের চিকিৎসাই করেন না, সহানুভূতি ও মমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষের মনের চিকিৎসাও করেন।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার শামীমা রহমান (৫০) ২২ বছর ধরে ধাত্রীর কাজ করছেন। দুই যুগ আগে অন্তঃসত্ত্বা ছোট বোনকে নিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মায়েদের পাশে দাঁড়াবেন। সে সংকল্প নিয়ে ২০০০ সালে তিনি এ কাজ শুরু করেন। হাসপাতালের নার্সের সহযোগিতা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি আজ অভিজ্ঞ ধাত্রী। মুঠোফোনে কল এলেই সন্তান প্রসবের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
নারীদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সহায়তা করতে করতে কুলসুমা বিবি এখন এলাকায় ‘জননী’ হিসেবে পরিচিত। তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী খালিশাজুরী গ্রামের এই নারীর বয়স এখন ৭০ বছর। প্রায় ৩০ বছর ধরে হাওর এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সেবা দিয়ে গেছেন। বয়স হওয়ায় এখন কুলসুমার ব্যস্ততা কিছুটা কমেছে। তবে এখনো জটিল কোনো সমস্যা দেখলে তাঁকে ডাকে লোকজন, তিনিও ছুটে যান। একটা সময় হাওর এলাকায় ছিল অপ্রতুল যোগাযোগব্যবস্থা। তখন বর্ষাকালে বা বিরূপ আবহাওয়াতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে তিনি ছুটে বেড়াতেন সন্তান প্রসবের কাজে। এ কাজে কোনো অর্থকড়িও নিতেন না, যার বিনিময়ে পেয়েছেন মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান।
মানুষের সেবা ব্রত হওয়ায় সুজিতা, শামীমা ও কুলসুমের প্রতি আমাদের অভিবাদন। তাঁদের মতো আরও যেসব নারী গোটা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এবং সর্বদা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের সবার প্রতি রইল আমাদের ভালোবাসা।