ঠেলাঠেলি বন্ধ করে শোধনাগারটি চালু করুন

সম্পাদকীয়

স্বার্থের দ্বন্দ্ব বলি আর সমন্বয়হীনতা বলি, তা যে দুধারি তরবারির মতো জনসাধারণকে কেটে চলেছে, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্প তার যেন একটা দৃষ্টান্ত। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সেটি তিন মাস পরীক্ষামূলকভাবে চালুও থেকেছিল, অথচ সোয়া ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শোধনাগারটি বন্ধ হয়ে আছে। এতে একদিকে সাধারণ মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের করের অর্থ গচ্চা যাচ্ছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মুন্সিগঞ্জ শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় পানি শোধনাগার নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৩ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেটি শেষ হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। এরপর গত আগস্ট থেকে তিন মাস সেটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু থাকে। ঠিকাদারি সংস্থার কাছ থেকে প্রকল্পের কাজ বুঝে না নেওয়ায় বন্ধ পড়ে আছে পানি বিশুদ্ধকরণ কার্যক্রম।

প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি গত সপ্তাহে সরেজমিন দেখতে পান, ৩ হাজার ৩০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে নির্মিত পানি শোধনাগারটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এটি পড়ে থাকায় পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কাঠামো ও পানিতে ভারী শেওলা জমে আছে। পানিতে ব্যাঙ সাঁতরাচ্ছে। অথচ শোধনাগারটির মাধ্যমে পাশের ধলেশ্বরী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে প্রতি ঘণ্টায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধ করা সম্ভব। তাতে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যেত। এখন প্রশ্ন হলো, যদি ফেলেই রাখা হবে, তাহলে কেন এত টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগারটি নির্মাণ করা হলো।

অথচ মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানি এখন অতি জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, যে ধলেশ্বরী নদীর পানি এত বছর ধরে তাদের গৃহস্থালি কাজের প্রধান উৎস ছিল, তা এখন কারখানার বর্জ্যে দূষিত; নলকূপেও আগের মতো পানি ওঠে না। শোধনাগার নির্মিত হওয়ার পরও কেন তারা সেই পানি থেকে বঞ্চিত হবে?

এর কারণ হলো, প্রকল্পটি হস্তান্তর নিয়ে ঠিকাদারি সংস্থা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পৌরসভার মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে; বলা চলে ঠেলাঠেলি চলছে। অথচ প্রকল্পটি যৌথভাবে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের। কিন্তু পৌরসভা কাজটি বুঝে নিচ্ছে না।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের দাবি, কাজ নিম্নমানের হওয়ায় সাবেক মেয়র কাজটি বুঝে নেননি। তবে শিগগিরই তাঁরা পানি শোধনাগারটি বুঝে নেবেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের সূত্র ধরে শোধনাগারটি হস্তান্তর না হওয়ার পেছনে প্রভাবশালীদের ভূমিকাকেও আমলে না নেওয়ার কোনো কারণ নেই। ঠেলাঠেলি বন্ধ করে মুন্সিগঞ্জের পানি শোধনাগারটি দ্রুত চালু করুন।