রাজধানী ঢাকা কতটা বাসযোগ্য শহর, সেটি তার পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হয়। কিন্তু ওয়াসা একের পর এক প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করলেও ঢাকার পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা নিয়ে আমাদের হতাশ হতেই হয়।
এর সর্বশেষ হতাশাজনক প্রকল্প হচ্ছে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার। প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শোধনাগার চালুও হয়েছে। রাজধানীর চারপাশের নদীদূষণ রোধের উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না।
কথা ছিল, প্রকল্পের আওতাধীন এলাকা থেকে পয়োবর্জ্য পাইপলাইনের মাধ্যমে শোধনাগারে যাবে। এরপর সেই বর্জ্য শোধনের মাধ্যমে বালু নদে গিয়ে পড়বে। কিন্তু পয়োবর্জ্য শোধনাগারে পৌঁছানোর পাইপলাইনই এখনো তৈরি হয়নি। এখন কেবল হাতিরঝিলের একাংশের পানি পরিশোধন করতে পারছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
এখন বালু নদে গিয়ে সেই পরিশোধিত পানিও পড়ছে, আবার অন্যান্য এলাকা থেকে আসা নোংরা পানিও সেখানে গিয়ে মিশছে। তার মানে নোংরা পানি পরিষ্কার করে আবার বালু নদের নোংরা পানিতেই ফেলা হচ্ছে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এ কাজের জন্যও বছরে খরচ হচ্ছে ২২৫ কোটি টাকা। মাঝখান দিয়ে বালু নদের দূষণও রোধ হলো না। জনগণের অর্থ কীভাবে অপচয় করা যায়, তার বড় উদাহরণ হতে পারে ওয়াসার এ প্রকল্প।
এটি জানা বিষয় যে ওয়াসার পয়োবর্জ্য লাইন ও নর্দমা বর্জ্যের লাইন আলাদা। দুই লাইনের কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনাও আলাদা। কিন্তু পয়ঃশোধনাগারটি পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজে না লাগিয়ে নর্দমার বর্জ্য শোধনে ব্যবহার করা হচ্ছে। তা–ও হাতিরঝিলের আংশিক অংশের। পাইপলাইন তৈরি না করেই ‘সাফল্য’ দেখাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন সেটিকে যেনতেনভাবে চালু রাখতে হবে, সেদিকেই যেন মনোযোগ ওয়াসার।
এর জন্য বছরে ২২৫ কোটি টাকা নোংরা জলে গচ্চা গেলেও যেন তাদের কিছু আসে যায় না। কারণ, এর জন্য কারও কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। কাউকে দোষী সাব্যস্তও করা হবে না। কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে না। এ বিষয়গুলো এখন ‘স্বতঃসিদ্ধ’ বলেই প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে জনগণের অর্থ অপচয়ের এমন ‘মচ্ছব’ চলছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রায় চার শ কোটি টাকা ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছিল। এর আগে গত বছরের প্রথম আলোর আরেকটি প্রতিবেদনে আমরা দেখি, ঢাকা ওয়াসার নয়টি প্রকল্পে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়।
আর অন্যদিকে ২০০৯ সালে ওয়াসার বর্তমান এমডি তাকসিম এ খান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৪ বার। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওয়াসার এ খেয়ালখুশির উন্নয়নের বোঝা এভাবেই টানতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ওয়াসার এসব প্রশ্নবিদ্ধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দিয়ে নীতিনির্ধারকেরা কীভাবে ঢাকাকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চান?