বালুখেকোদের কোনোভাবে ছাড় নয়

দেশের নদ–নদীগুলোর সর্বনাশ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বৈধ–অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে। প্রশাসন বালুমহাল ইজারা দিলেও এর বাইরেও তোলা হয় বালু। আর ইজারা ছাড়া বালু তোলার বিষয়টি তো নতুন কোনো ঘটনাই নয়। সেটিই আমরা দেখতে পেলাম নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মহাদেও নদে। সেখানে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যে প্রশাসন সেখানে অভিযানও চালিয়েছে। যেভাবে বালু তোলায় বেপরোয়া হয়েছেন সেখানকার বালুখেকোরা, তাতে নদটি নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, একটা সময় মহাদেও নদে বিশাল একটি বালুমহাল জেলা প্রশাসনের ইজারাভুক্ত ছিল। কিন্তু ইজারাধীন জায়গায় বালু না থাকায় নদের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন শুরু করেন ইজারাদারেরা। এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি নদের তীরের বাড়িঘর, বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙার উপক্রম হয়। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনি তৎপরতার কারণে আদালতের এক আদেশে নদটিতে বালুমহালের ইজারা বাতিল করা হয়। এর পর থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়।

তবে কোনো ধরনের হাইড্রোগ্রাফিক ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ, পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব নিরূপণ না করেই জেলা প্রশাসন চলতি বছরের জানুয়ারিতে মহাদেও নদের বালুমহাল ইজারা দিতে চায়। তখনো আদালতের সিদ্ধান্তে সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি একটি চক্র নদের বিভিন্ন স্থান থেকে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করছে।

চক্রটি প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে নৌকাপ্রতি এক হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ আছে। গত সোমবার মধ্যরাতে একটি এলাকায় অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। সেখান থেকে চার বালু ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। জব্দ করা হয় বালুভর্তি চারটি নৌকা। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে চাঁদাবাজ চক্রের অন্য লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যান। তবে আটক চার ব্যক্তিকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানাপ্রাপ্ত এক বালু ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ইউএনও, পুলিশ আর সাংবাদিকদের নৌকাপ্রতি টাকা দিতে হয়। তাই নৌকাপ্রতি এক হাজার টাকা করে চাঁদা দেন তাঁরা। তাঁর এ বক্তব্যের সত্যতা থাকলে তাহলে বিষয়টি গুরুতর।

জেলা প্রশাসকের বক্তব্য, কলমাকান্দায় কোনো বালুমহাল নেই। মহাদেও বালুঘাট ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই নদ থেকে বালু তোলা বন্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমরা তাঁর প্রতি আস্থা রাখতে চাই। প্রশাসন, পুলিশ বা সাংবাদিকদের কেউ এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বালুখেকোদেরও কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না। আশা করি জেলা প্রশাসনের এ–ও বোধোদয় হবে, বারবার আদালতের সিদ্ধান্তের পর নদটিতে বালুমহাল ইজারা দেওয়াটা উচিত হবে না।