শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিছু জায়গায় পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। যেমন সুন্দরবনে ডাকাতের উৎপাত বেড়ে গেছে। নতুন ডাকাত দলের আবির্ভাব হয়েছে। ডাকাতি ছাড়াও ঘটছে অপহরণের ঘটনা। নজরদারির অভাবে সুন্দরবনে নতুন করে এ আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। যদিও সুন্দরবনে ডাকাত দল ও চোরাচালান চক্রের তৎপরতা কখনো থেমে ছিল না। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খুলনার কয়রা, দাকোপ ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত পশ্চিম সুন্দরবনে আসাবুর বাহিনী, শরিফ বাহিনী, আবদুল্লাহ বাহিনী, মঞ্জুর বাহিনী, দয়াল বাহিনী নামে বনদস্যুদের নতুন কয়েকটি দল তৎপরতা শুরু করেছে। দস্যুতায় যুক্ত হয়েছেন জেল পালানো কয়েদি ও চিহ্নিত অপরাধীরাও।
ডাকাত দল সুন্দরবনে মৎস্য আহরণে যাওয়া জেলেদের কাছ থেকে মাছ, টাকা, মুঠোফোনসহ সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে। এমনকি বনে ঢুকলে জেলেদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের চাঁদাও দাবি করছে। গত তিন মাসে পশ্চিম সুন্দরবনে অন্তত তিনটি অপহরণের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর বাইরেও অপহরণের ঘটনা ঘটলে জেলেরা ঝামেলা এড়াতে প্রকাশ করতে চান না। বন বিভাগ জানাচ্ছে, ডাকাত দলের বিরুদ্ধে তারা অভিযান চালাচ্ছে। কোথাও ডাকাত দলের মুখোমুখি হয়েছে তারা এবং উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলনের সংগঠকদের বক্তব্য, ডাকাত দলের দৌরাত্ম্যের কারণে বনজীবীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায়ও কম হবে। পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ডাকাত দলগুলোকে দ্রুত প্রতিরোধ না করলে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষকের দাবি, সুন্দরবনে এখনকার দুষ্কৃতকারীরা বড় কোনো ডাকাত দল নয়। তাদের অতটা অস্ত্রও নেই। মূলত জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটি টহল ফাঁড়িকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত আরও জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আমরা বন বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করছি, সুন্দরবনের সুরক্ষা এবং জেলে ও বনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা যথাযথ ভূমিকা রাখবে।